পুলিশ প্রমাণ করেছে, যে পরিচয়েই অপরাধ করুক অপরাধীর ছাড় নেই

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী গণধর্ষণের ঘটনায় একে একে এজাহারভুক্ত ছয় আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত। শুরুটা হয়েছিল সিলেট রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মফিজ উদ্দিন আহমদের পরিকল্পনা করা একটি কৌশল প্রয়োগ করে। মানুষ ভেবেছিলেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে চলে গিয়ে আসামিরা পার পেয়ে যাবেন। তবে পুলিশের তৎপরতায় সেই ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ছয় আসামি গ্রেপ্তারের বিষয় নিয়ে কথা হয় ডিআইজির সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিলেটে নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল মেহেদী।
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: গণধর্ষণের পর অভিযুক্তরা পালিয়ে গেলেন। প্রথম ৩৮ ঘণ্টায়ও কেউ ধরা না পড়ায় মানুষের ভাবনা ছিল, সবাই মনে হয় পার পেয়ে যাবেন। ঘটল উল্টোটা। শুরুতে আপনার একটি কৌশল নাকি খুব কার্যকর হয়েছে। কী সেটা, বলা যাবে?

ডিআইজি মফিজ উদ্দিন: না, কৌশলটা গোপন কিছু না। বলতে পারেন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ। এমসি কলেজ ছাত্রাবাস সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) অধীন। ঘটনাস্থল যেহেতু এসএমপির, তাই শুরুতে আমাদের কোনো কাজ ছিল না। কিন্তু সেখান থেকে সব অপরাধী পালিয়ে যান। পালিয়ে যাবেন তো রেঞ্জ পুলিশ এলাকা হয়েই। তাই সতর্ক করা হয় রেঞ্জ পুলিশকে। দেখলাম, তিনজন আসামির বাড়ি সীমান্ত এলাকায়। শুরুতে সীমান্তে নজরদারি বাড়ালাম। এরপর তাঁদের গ্রামের বাড়ির দিকে তিন স্তরের নজরদারি রাখা হয়। জনপ্রতিনিধিদেরও অংশগ্রহণ ছিল। সীমান্ত নজরদারিটাই কাজ দিয়েছে। সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে দোয়ারাবাজার যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হন প্রধান আসামি সাইফুর রহমান। এরপর চুনারুঘাট সীমান্ত এলাকা হয়ে যাওয়ার পথে আরও একজন গ্রেপ্তার হন। নবীগঞ্জ এলাকায় রাতে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি গ্রেপ্তার আমরা শুরু করেছি, শেষটা করল র‌্যাব। আমাদের অভিযান জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চৌকস কর্মকর্তাদের একটি দল নিয়ে, যারা প্রযুক্তিতে খুবই দক্ষ।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: মহানগর থেকে পালিয়ে জেলা পুলিশ তথা সিলেট রেঞ্জ পুলিশের আওতাধীন বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ধরা পড়লেন আসামিরা। সমন্বিত অভিযানের চিন্তাটা কেমন করে এল?

ডিআইজি: ওই যে বললাম, এসএমপি এলাকায় অপরাধ ঘটিয়ে আমাদের ঘাড়ে এসে পড়লেন অপরাধীরা। আমাদের হাতে চারজন আর র‍্যাবের হাতে দুজন ধরা পড়লেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: অভিযুক্তরা সংঘবদ্ধ হয়ে অপকর্ম করেছেন। পালিয়েছেনও সংঘবদ্ধভাবে। ধরা পড়ার সময় দেখা গেল একেকজন একেক জায়গায়। কেউ পরিবারের কাছে বা এলাকায় যাননি। এ ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

ডিআইজি: অপরাধের ধরনের কারণে এমনটি হয়েছে। পরিবার আশ্রয় দেবে না ভেবে সেখানে যায়নি। এলাকার মানুষজনও ক্ষুব্ধ ছিল। দেখামাত্র ধরিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতিও দেখা গেছে। আমি মনে করি, এই ধরনের অপরাধ করলে অবস্থা কী হয়, এমন একটি সামাজিক বার্তা এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পাওয়া গেছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: একটি ভয়াবহ অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ আসামি গ্রেপ্তার। সেটি সফলভাবে শেষ হলো। মানুষ খুশি। আপনি কী ভাবছেন?

ডিআইজি: জনগণের সবচেয়ে কাছের বাহিনী হচ্ছে পুলিশ। মানুষের খুশিতে আমিও খুশি। পুলিশ প্রমাণ করে দিল, অপরাধীরা যে পরিচয়েই অপরাধ করুক না কেন ছাড় নেই। আমাদের প্রথম কাজটি শেষ, এখন বিচার প্রক্রিয়ার দিকে কাজটি এগিয়ে নেবে নগর পুলিশ। দ্রুততার সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবে, এটিই আশা করি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এসব অপরাধের মূল উৎপাটনে ধর্ষণকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও শাস্তির আওতায় আনার দাবি উঠছে। আপনি কী বলেন?

ডিআইজি: আমিও এমনটাই মনে করি। তবে স্থানটি এসএমপির। এ ক্ষেত্রে আমার প্রত্যাশা করা ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমি ওই এলাকার সংযোগ অংশে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি।