পুলিশি নিরাপত্তা না পেয়ে পরীক্ষা দিতে পারলেন না দুই শিক্ষার্থী

পটুয়াখালী জেলার মানচিত্র

পরীক্ষা দিতে যাওয়া-আসার পথে জীবননাশের শঙ্কায় নিরাপত্তার জন্য পুলিশের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছিলেন। পুলিশ নিরাপত্তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় পটুয়াখালীর বাউফল সরকারি কলেজের দুই শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিতে পারেননি।

ওই দুই পরীক্ষার্থীর নাম শাহরিয়ার অনির্বাণ ও মো. সোহেল খান। তাঁদের পরীক্ষার কেন্দ্র উপজেলার ইদ্রিস মোল্লা ডিগ্রি কলেজ। তাঁদের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। শাহরিয়ার কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সোহেল একই কমিটির সদস্য। পরীক্ষা দিতে না পারায় গত শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে এক পরীক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ‘তারা (পরীক্ষার্থী) জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু জনে জনে ব্যক্তি নিরাপত্তা দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই।’

গত শনিবার শুরু হয়েছে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের পরীক্ষা। মোট ছয় বিষয়ের পরীক্ষা হবে। ওই দুই পরীক্ষার্থী প্রথম দিন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারেননি। বাকি পাঁচ বিষয়ের ১৫, ১৮, ২১, ২৩ ও ৩০ নভেম্বর পরীক্ষা নেওয়ার দিন ধার্য আছে।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজ। অপর পক্ষের নেতৃত্বে বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হক। ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে সাত বছরে কমপক্ষে অর্ধশত হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে কমপক্ষে অর্ধশত। শাহরিয়ার ও সোহেল মেয়রের সমর্থক। ২০২০ সালের ২৪ মে বাউফল থানার পূর্ব পাশে ডাকবাংলোর সামনের সড়কে পুলিশের উপস্থিতিতে একটি তোরণ নির্মাণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় তাপস নামের এক যুবলীগ কর্মী আহত হন। পরবর্তীকালে তিনি মারা যান। তাপস সাংসদ আ স ম ফিরোজের পক্ষের কর্মী ছিলেন।

ওই ঘটনায় মেয়র জিয়াউলকে হুকুমের আসামি করে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৪ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় শাহরিয়ার ও সোহেল আসামি। যদিও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মেয়র জিয়াউল, শাহরিয়ার, সোহেলসহ ১৬ ব্যক্তিকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। কিন্তু আদালত ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ করেননি।

শাহরিয়ারের লিখিত আবেদন ও ফেসবুক লাইভ থেকে জানা গেছে, তাঁকে প্রতিপক্ষের লোকজন জীবননাশের হুমকি দিয়ে আসছেন। তা ছাড়া পরীক্ষার কেন্দ্রটি সাংসদ আ স ম ফিরোজের বাড়ির কাছে এবং তাঁর বাবার নামের প্রতিষ্ঠান। ওখানে পরীক্ষা দিতে যাওয়া মানে জীবননাশের শঙ্কা। সেই শঙ্কা থেকে বাউফল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের সুপারিশ নিয়ে কেন্দ্র পরিবর্তন করে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করা হয়। কিন্তু স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে কেন্দ্র পরিবর্তন করে পরীক্ষা দেওয়ার বিধান না থাকায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষার কেন্দ্রে যাওয়া ও আসার সময় নিরাপত্তা চেয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন তিনি। জেলা প্রশাসক বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

শাহরিয়ারের লিখিত আবেদন ও এ ফেসবুক লাইভে দেওয়া বক্তব্য সূত্রে আরও জানা গেছে, পুলিশ সুপার স্থানীয় থানায় আবেদন করতে বলেন। সে অনুযায়ী শুক্রবার সন্ধ্যায় বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন তিনি। তখন ওসি তাঁদের জানিয়ে দেন, কালাইয়া খুবই ঝামেলার জায়গা। তিনি (ওসি) নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারবেন না এবং তিনি (ওসি) বলেন, জীবনের চেয়ে পরীক্ষা বড় নয়। তাই পরীক্ষা না দেওয়ার পরামর্শ দেন ওসি। এ কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর আর পরীক্ষা দেওয়া হলো না।

শাহরিয়ার আরও বলেন, ‘আমার শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। আমি প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে বাকি পরীক্ষাগুলো দিতে চাই।’
সোহেল বলেন, ‘অন্য কোনো কারণের জন্য নয়, পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। পুলিশ তা-ও দিল না। এতে আমার শিক্ষাজীবন নষ্ট হয়ে যাবে।’