পুলিশের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলায় সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ

আশরাফুল আলম

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় সাংবাদিক আশরাফুল আলম পুলিশের রোষানলের শিকার হয়ে এখন কারাবন্দী। ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পুলিশের দায়ের করা অন্তর্ঘাতমূলক কাজের ষড়যন্ত্র করার অপরাধের গায়েবি মামলায় গত রোববার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।

আশরাফুল আলম ইত্তেফাকের বদরগঞ্জ উপজেলার সাবেক প্রতিনিধি। বর্তমানে তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত আমার সংবাদ ও স্থানীয় দৈনিক প্রথম খবরের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বদরগঞ্জ পৌরসভার সাহাপুর গ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।

আশরাফুলের পরিবারের অভিযোগ, ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি বদরগঞ্জ থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার আসামিকে ধরতে গিয়ে বাদীর কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি এবং পরে তাঁকে (সিরাজুল) বদলি করার ঘটনায় একাধিক সংবাদ ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়। ওই সময় আশরাফুল ইত্তেফাকের বদরগঞ্জ প্রতিনিধি ছিলেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পরে এসআই সিরাজুল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আতিকুর রহমানের যোগসাজশে ওই মামলায় গোপনে আশরাফুলের নাম জড়িয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ওই দুই কর্মকর্তা বদলির সুবাদে বদরগঞ্জ থানা থেকে চলে যান।
আশরাফুলের পরিবার আরও জানায়, ওই মামলার বিষয়ে আশরাফুল এত দিন কিছুই জানতেন না। হঠাৎ করে গত রোববার বেলা ১১টার দিকে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানামূলে বদরগঞ্জ থানা–পুলিশ তাঁকে আমরুলবাড়ি গ্রামের বাড়ির পাশের রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার করে।

ওই মামলার নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন এসআই সিরাজুল বাদী হয়ে বদরগঞ্জ থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ওই মামলাটি করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাত একটার দিকে তিনি জানতে পারেন যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় বদরগঞ্জ পুরাতন বাজারের বান্না ডিজিটাল নামক দোকানের ভেতরে অন্তর্ঘাতমূলক কাজের ষড়যন্ত্র করার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক চলছে। সেই বৈঠকে আশরাফুল ছিলেন। এ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা ও পৌর শাখার চার নেতাকে এজাহার নামীয়সহ ৩০-৩৫ কর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। ওই মামলায় সাংবাদিক আশরাফুলকে কোনো আসামি করা হয়নি। এজাহারে সাক্ষী করা হয় বদরগঞ্জ পৌরসভার বালুয়াভাটা গ্রামের আবু তালহা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ওসমানপুর বিচিবাড়ী গ্রামের রেজাউল করিমকে।

সাক্ষী রেজাউল করিম বলেন, ‘ওই মামলা সম্পর্কে বা মামলায় আমাকে সাক্ষী করার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সাংবাদিক আশরাফুল জামায়াতবিরোধী প্রগতিশীল মানুষ।’ অনেকটা একই কথা বলেন, অন্য সাক্ষী আবু তালহাও।
বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক টুটুল চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক আশরাফুল জামায়াতবিরোধী মানুষ। জামায়াতের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে তাঁর গোপন বৈঠক করার অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কোনো কারণে আক্রোশবশত পুলিশ তাঁকে ওই মামলায় জড়িয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত হওয়া দরকার।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির তালিকায় সাংবাদিক আশরাফুলের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন এসআই আতিকুর রহমান।
এ ব্যাপারে ওই সময় বদরগঞ্জ থানার দায়িত্ব পালনকারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতারুজ্জামান প্রধান (বর্তমানে রংপুর মহানগরের তাজহাট থানার ওসি) বলেন, ‘মামলায় সাংবাদিক আশরাফুলের নাম জড়িয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক। পুরো বিষয়টি আমার অগোচরে হয়েছে।’

এ বিষয়ে মামলার বাদী এসআই সিরাজুল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।’
ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আতিকুর বলেন, ‘আমি তদন্ত কর্মকর্তা হলেও সবকিছু করেছেন মামলার বাদী এসআই সিরাজুল।’
বদরগঞ্জ থানার বর্তমান ওসি হাবিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, আদালতের পরোয়ানামূলে সাংবাদিক আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সাংবাদিক আশরাফুলকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের ঘটনায় বদরগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। অবিলম্বে তাঁর মুক্তির দাবি জানিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ওই মামলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।
বদরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহফুজার রহমান বলেন, ‘সাংবাদিক আশরাফুল জামায়াত তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই জড়িত নন। মূলত ওই সময়ে পুলিশের এক কর্মকর্তার রোষানলের শিকার হয়েছেন আশরাফুল। পুরো বিষয়টি তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’