পুলিশের মাইকিংয়ের পরও গাইবান্ধায় আতঙ্ক কাটেনি

গাইবান্ধা পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে গত শনিবার একটি কেন্দ্রের ব্যালট ও মালামাল নিয়ে ফেরত আসার মুহূর্তে পুলিশের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও র‍্যাবের আরও তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করেন তাঁরা।
ফাইল ছবি

গাইবান্ধায় পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গত চার দিনে নতুন করে কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। কাউকে হয়রানি করা হবে না বলে মাইকিংয়ের পরও এলাকায় মানুষের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক কাটেনি। গ্রেপ্তারের ভয়ে শহরের পূর্বকোমরনই এলাকা আজ বুধবারও পুরুষশূন্য হয়ে আছে।

আজ সকালেও গাইবান্ধা শহরের পূর্বকোমরনই এলাকা সরেজমিনে ঘুরে কোনো পুরুষ দেখা যায়নি। এলাকায় শুধু নারী, বৃদ্ধ ও ছোট শিশুরা ছিল। গ্রেপ্তারের ভয়ে লোকজন এলাকাছাড়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বকোমরনই এলাকার এক নারী বলেন, বাড়িতে থাকার জন্য গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ মাইকিং করেছে। তারপরও আতঙ্ক কাটছে না। পুরুষেরা বাড়িতে আসছেন না। অন্যত্র পালিয়ে আছেন।

একই এলাকার আরেক নারী বলেন, পুলিশ মাইকিং করেছে, তাতে কী! তাদের কথা কেউ বিশ্বাস করছেন না। পুরুষেরা পালিয়ে আছেন। ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে নারীরা আতঙ্কে আছেন।

এ বিষয়ে আজ সকালে গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজার রহমান বলেন, তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদেরই গ্রেপ্তার করা হবে। কাউকে হয়রানি করা হবে না। আতঙ্ক কাটাতে গতকাল সকাল নয়টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী পূর্বকোমরনই এলাকায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদের সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মাইকিং ও গণসংযোগ করা হয়েছে। হ্যান্ডমাইকে মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে।

গত শনিবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা পৌরসভা নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ শেষে শহরের পূর্বকোমরনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা না করেই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ ও নির্বাচনী অফিসের লোকজন ব্যালট এবং মালামাল নিয়ে রওনা দেন। এমন অভিযোগে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বহিষ্কৃত সদস্য আনওয়ারুল সরওয়ারের (রেল ইঞ্জিন) সমর্থকেরা পুলিশের ওপর হামলা করে একটি গাড়িতে আগুন দেয়। তারা পুলিশ ও র‌্যাবের আরও তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশও কয়েকটি ফাঁকা পাল্টা গুলি ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজিত জনতার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ওই রাতেই গাইবান্ধা সদর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলা পুলিশ ও অন্য মামলা করেছে র‍্যাব। পুলিশের মামলায় ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। র‌্যাব ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে মামলা করেছে। এদিকে মামলা দায়েরের পর ওই রাতেই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।