পুলিশের সামনেই প্রতিবেশীকে মারধর করলেন কাউন্সিলর ও তাঁর স্ত্রী
মাদারীপুরের কালকিনিতে পুলিশের সামনে এক সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা ও মারধর করেছেন কালকিনি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা। গতকাল বুধবার বিকেলে কালকিনি উপজেলার নয়াকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
তবে কাউন্সিলর আনোয়ারের দাবি, ওই পরিবারের লোকজন তাঁকে আগে আক্রমণ করেছিলেন। তাঁর লোকজন প্রতিরোধ করেছেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী পরিবারটি কালকিনি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগটি রাত ১০টার দিকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে পুলিশ।
পরিবারটির ওপর হামলার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, তাঁর স্ত্রী রিক্তা বেগম ও তাঁদের ছেলেরা ওই পরিবারের সদস্যদের মারধর করছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নয়াকান্দি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ঝন্টু চন্দ্র মণ্ডল তাঁর পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। সম্প্রতি ধান মাড়াই করার জন্য প্রতিবেশী এক ব্যবসায়ীর থেকে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন ভাড়া আনেন ঝন্টু। ধান মাড়াই করার জন্য একই মেশিন ভাড়া করেন কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন। মাড়াইয়ের কাজ করতে ঝন্টুর থেকে মেশিনটি নিতে আসেন আনোয়ার। এ সময় ঝন্টু তাঁর ধানমাড়াই শেষ না হওয়ায় ওই মেশিন কাউন্সিলর আনোয়ারকে দিতে অপারগতা জানান। এর জের ধরে আনোয়ারের সঙ্গে ঝন্টুর কথা–কাটাকাটি হয়। এ সময় ঝন্টুকে ধানমাড়াই বন্ধ রাখতে বলা হয়।
ঝন্টুর পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশের তিন সদস্য দুই পক্ষের কথা শুনে সমাধান দিতে ঝন্টুর বাড়িতে আসেন। এ সময় পুলিশ ঝন্টুদের ধানমাড়াই শুরু করতে বললে কাউন্সিলর ও তাঁর স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে ঝন্টুকে মারধর শুরু করেন। ঝন্টুর ছেলে তাঁদের বাধা দিতে গেলে তাঁকেও মারধর করেন কাউন্সিলর আনোয়ারের লোকজন।
ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কাউন্সিলরের স্ত্রী রিক্তা বেগম অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ঝন্টুদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। কাউন্সিলর আনোয়ার তখন পাশে দাঁড়িয়ে স্ত্রীকে দূরে সরানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু মারধর থেকে রোখা যাচ্ছিল না তাঁকে। এর মধ্যে ঝন্টুর ছেলে উজ্জ্বল এ সময় মুঠোফোন বের করে ভিডিও করতে গেলে কাউন্সিলর আনোয়ার উজ্জ্বলের ফোন কেড়ে নিয়ে তাঁকে মাটিয়ে ফেলে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এ সময় একটি ইট দিয়ে উজ্জ্বলের মাথা ফাটিয়ে দেন কাউন্সিলর আনোয়ার।
ভুক্তভোগী ঝন্টু চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘ধানমাড়াই ছাড়াও আমাদের ওপর আগে থেকেই আক্রোশ আছে কাউন্সিলর আনোয়ারের। এই আক্রোশের কারণে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় আমাদের ঘরের চারজনই কমবেশি আহত হই। আমার ছেলে বেশি আহত হয়েছে। ওরে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।’ ঝন্টুর ছেলে উজ্জ্বল মণ্ডল বলেন, ‘যখন কাউন্সিলর আর তার স্ত্রী আমাদের গালাগাল ও হুমকি দিতে থাকে, আমাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলে, তখন আমি ভিডিও করতে ফোন বের করি। এরপরই কাউন্সিলর বলে ওঠে, “ও ভিডিও করে কেন, ওরে ধর।” বলেই আমার ওপর হামলা চালায় কাউন্সিলর।’
অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের অনেক ধান কাটা হয়েছে, এখন মেশিন লাগবে, কিন্তু ঝন্টুর ছেলে সেই মেশিন দিচ্ছে না। মেশিন আনতে গেলে ঝন্টুর ছেলে আমার ওপর আগে আক্রমণ করে। আমি একজন কমিশনার। আমার ওপর আক্রমণ করবে ঝন্টুর ছেলে, এটা তো খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।’
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসতিয়াক আশফাক প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ গেছিল দুই পক্ষের কথা শুনতে। কিন্তু কাউন্সিলর আনোয়ার ও তার লোকজন অর্তকিতে পরিবারটির ওপর হামলা চালায়। সন্ধ্যায় ঝন্টু মণ্ডল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার আসামি করা হয়েছে কাউন্সিলর আনোয়ার, তাঁর ছেলে রিফাত বেপারি ও ভাতিজা সাব্বির বেপারিকে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।