পূজায় বাজেট কম, কমেছে মণ্ডপ

কোনো কোনো মণ্ডপে এখনো চলছে প্রতিমায় রঙের কাজ। হিজুলীর একটি মণ্ডপ, পৌর এলাকা, মানিকগঞ্জ, ১০ অক্টোবর
প্রথম আলো

মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলা ও ২টি পৌরসভায় গত বছর ৫০৬টি মণ্ডপে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছিল। এবার ৪৩টি কমে ৪৬৩টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হচ্ছে।
২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এরই মধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে প্রতিমায় রংতুলির কাজ।
আয়োজকেরা বলেন, এবার চলমান করোনা সংকট ও বন্যা দুর্গাপূজায় প্রভাব ফেলেছে। গতবারের চেয়ে কমসংখ্যক মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। আবার যেসব মণ্ডপে পূজা হচ্ছে, সেখানে বাজেটে করা হয়েছে কাটছাঁট।
জানতে চাইলে জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনির্বাণ কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেই এবার দুর্গাপূজা উদযাপিত হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি এবার মানিকগঞ্জে দুই দফায় বন্যায় মানুষের হাতে টাকাপয়সা নেই। এই আর্থিক সংকটে আয়োজকদের অনেকে প্রতিমা তৈরি ও পূজার আয়োজন থেকে সরে এসেছেন।

পূজার বাজেটে কাটছাঁট করায় এবার প্রতিমাশিল্পীদের পারিশ্রমিকও কমে গেছে। মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার প্রতিমাশিল্পী সুধীর চন্দ্র পাল বলেন, এবার প্রতিমার সংখ্যা কম। পারিশ্রমিকও কম। আগে যেখানে ১টি প্রতিমা তৈরি করে ১ লাখ টাকা পাওয়া যেত, এবার সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। করোনায় প্রায় সব প্রতিমাশিল্পীকেই কম বাজেটে প্রতিমা গড়তে হচ্ছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর মানিকগঞ্জ পৌরসভাসহ সদর উপজেলায় ৯৭টি, সাটুরিয়ায় ৬০টি, ঘিওরে ৬৫টি, দৌলতপুরে ৩৮টি, শিবালয়ে ৮২টি, হরিরামপুরে ৫৯টি এবং সিঙ্গাইর পৌরসভাসহ এ উপজেলায় ৬২টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি চলছে। গত বছর এখানে ৫০৬টি মণ্ডপে পূজা হয়েছিল।
এদিকে এবার করোনায় পূজা উদযাপনের আয়োজন সীমিত করতে বলা হয়েছে। আয়োজকদের ২৬টি নির্দেশনা অনুসরণ ও প্রতিপালনের কথা বলেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহালয়ার অনুষ্ঠান সীমিত করা, নিচু শব্দে ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য সংগীত বাজানো থেকে বিরত থাকা এবং সব ধরনের সাজসজ্জা, মেলার আয়োজন, আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিহার।
৫ অক্টোবর পূজা উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভা হয়। এতে জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, করোনায় প্রতিটি মণ্ডপে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। দর্শনার্থী, ভক্ত, পুরোহিতসহ সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মণ্ডপে নারী ও পুরুষদের যাতায়াতের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে। আতশবাজি ও পটকা ব্যবহার করা যাবে না। পাশাপাশি সড়ক বন্ধ করে যে অস্থায়ী মণ্ডপ তৈরি হয়, সেগুলোও করা যাবে না। মানুষের জীবন বাঁচলে সামনের বছর ধুমধাম করে পূজা করা যাবে।

জানতে চাইলে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব সাহা বলেন, ‘এবারের দুর্গোৎসবের অনুষ্ঠান পূজা-অর্চনার মাধ্যমে মন্দির প্রাঙ্গণেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) রিফাত রহমান বলেন, পূজায় দর্শনার্থী, ভক্ত, পুরোহিতসহ সবার নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে আয়োজকদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।