পৃথিবীর আলো দেখা হলো না শিশুটির

ফেনীর সোনাগাজীর জেসমিন আক্তাররের প্রসব ব্যথা শুরু হলে স্বামী রাশেদ আলম তাঁকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাঁরা হাসপাতালে পৌঁছালেও ফুটফুটে নবজাতক নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেননি। পৃথিবীর আলো দেখা হয়নি শিশুটির। তাঁদের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপারভাইজার তাঁদের একপ্রকার জিম্মি করে সন্তান প্রসব করাতে বাধ্য করেছেন। নিরাপদ প্রসব কক্ষে নার্সের অনিরাপদ কর্মকাণ্ডে তাঁদের স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে।

মৃত নবজাতকের বাবা রাশেদ আলম বলেন, শনিবার সকালে তাঁর স্ত্রী জেসমিন আক্তারের (২০) প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। তাঁরা উপজেলার পূর্ব বড়ধলী এলাকা থেকে দীর্ঘ আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জেসমিনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এরপর তিনি হাসপাতালের জান্নাতুল ফেরদৌস নামে একজন মিডওয়াইফের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি প্রসূতিকে প্রসবের কক্ষে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এ সময় নার্সিং সুপারভাইজার রেখা পাল ওই কক্ষে প্রবেশ করে মিডওয়াইফকে ভর্ৎসনা করে বের করে দেন।

রাশেদ আলম বলেন, রেখা নিজেই তাঁর স্ত্রীকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথা কমার জন্য ইনজেকশন ও ওষুধ দিয়ে বলেন, নবজাতকের সবকিছু ঠিক আছে। এখানে নবজাতকের প্রসব করাতে হলে তাঁকে আট হাজার টাকা দিতে হবে।

বিকেলে প্রসব যন্ত্রণা আরও বেড়ে গেলে রাশেদ তাঁর স্ত্রীকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বললে রেখা ওষুধ দিয়ে বলেন, আজ সন্ধ্যার মধ্যে তাঁর প্রসব হবে, এখানে থাক কোনো সমস্যা হবে না। সন্ধ্যায় প্রসবের পর শিশুর কোনো নড়াচড়া না দেখে তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েন। পরে নবজাতকের গলায় কয়েকটা আঁচড় দেখতে পান।

নবজাতকের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, প্রসবের পর শিশুটির নড়াচড়া না দেখে ওষুধ আনার কথা বলে নার্স রেখা পাল পালিয়ে যান। এরপর তাঁকে আর হাসপাতালে দেখা যায়নি। রাতে রেখা রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে নবজাতকের পরিবারকে সমঝোতার প্রস্তাব দেন।

রাশেদ আলম বলেন, এ ঘটনায় তিনি রেখা পালের বিরুদ্ধে মামলা ও সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে আজ রোববার সকালে হাসপাতালে গিয়ে রেখা পালকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশ প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে রেখা পাল তাঁকে কিছুই জানাননি। অন্যদের থেকে শুনে পরে তিনি জেনেছেন। নিরাপদ প্রসবের ক্ষেত্রে নবজাতকের মৃত্যু হওয়ায় হয়তো রেখা পালের ভুল হতে পারে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে রেখার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।