পৃথিবীর আলো না দেখা সুবর্ণার সামনে এবার উচ্চশিক্ষার চ্যালেঞ্জ

মায়ের সঙ্গে সুবর্ণা রানী দাস
ছবি: প্রথম আলো

জন্ম থেকেই সুবর্ণার চোখের আলো নেই। তবে সংগ্রামী মায়ের হাত ধরে সুবর্ণাও হয়ে উঠেছেন অদম্য। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়েছেন সাফল্যের সঙ্গেই। এবার তাঁর সামনে স্বপ্নপূরণের শেষ ধাপ—উচ্চশিক্ষা। তবে এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। আর আছে শ্রুতলেখক না পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা।

সুবর্ণার বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের হড়িনধরা গ্রামে। তাঁর পুরো নাম সুবর্ণা রানী দাস। দারিদ্র্য ও অন্ধত্বকে জয় করে শহরের ইয়াছিন উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান। ভর্তি হন রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজে। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবার এইচএসসিতেও এসেছে জিপিএ-৫। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতলেখক। আবার রয়েছে নিত্য আর্থিক সংকট। এখন উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সুবর্ণা ও তাঁর মা।

সুবর্ণার মা কণিকা রানী দাস জানান, সুবর্ণা কখনো পৃথিবীর আলো দেখতে পাননি। দুই মাস বয়সের সময় সুবর্ণার বাবা মারা যান। এরপর কণিকা বাবার বাড়ি চলে আসেন। বাবার বাড়িতেও অভাবের সংসার। কাঁথা সেলাই এবং এ বাড়ি–সে বাড়ি কাজ করে সংসার চালানো শুরু হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ জন্মাতে থাকে সুবর্ণার। তাঁকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয়।

কণিকা রানী বলেন, ‘গ্রাম থেকে তাকে আমিই প্রতিদিন নিয়ে আসি। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে আসতে হয়। আবার বাসস্ট্যান্ড থেকে পায়ে হেঁটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কখনো প্রখর রোদে পুড়েছি, বৃষ্টিতে ভিজেছি। অনেক দিন পরনের ভেজা শাড়ি শরীরেই শুকিয়েছি। মেয়েকে ঠিকমতো খেতে দিতে পারিনি। মাঝেমধ্যে স্কুলের এক কোণে বসে কাঁথা সেলাই করেছি।’

কণিকা রানী আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা সুবর্ণার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা। পরীক্ষার জন্য শ্রুতলেখক প্রয়োজন। নিজেরাই টাকাপয়সার সংকটে থাকেন। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পাবেন, তার ঠিক নেই। এ কারণে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবেন। মেয়েটা ভালো জায়গায় পড়ালেখার সুযোগ পেলে এত দিনের পরিশ্রম সার্থক হবে। সব মিলিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

প্রথম আলো রাজবাড়ী বন্ধুসভার বন্ধু সুবর্ণা রানী দাস। তিনি বলেন, এসএসসি পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতির বই বিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন। কলেজের বই নিজেদের কিনতে হয়েছে। সাংসদ, জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সহায়তা করেছেন। বন্ধুসভার মুনমুন উদ্যোগ নিয়ে সহায়তা করেছেন। প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি পেয়েছেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে তাঁর স্বপ্ন পূরণ হবে। অন্যথায় সংগীত বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করবেন। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে চান। নিজে স্বাবলম্বী হতে চান।