পেঁয়াজের বিকল্প হতে পারে চিভ

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্রের নিজস্ব খামারে চাষ করা চিভ।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্রের নিজস্ব খামারে চাষ করা চিভ।

হঠাৎ করেই বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। তাই বলে রসনাবিলাসী বাঙালি পেঁয়াজ ছাড়া থাকবে, তা কেমন করে হয়। পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের জন্য চিভ নামের মসলার জাত চাষে সাফল্যও পেয়েছেন গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

মসলা গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন গবেষণা শেষে নর্থ চায়না, সাইবেরিয়ান ও মঙ্গোলিয়া অঞ্চলের মসলাজাতীয় বহুবর্ষজীবী চিভ নিয়ে সাফল্য পান ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নূর আলম চৌধুরী। সহযোগী হিসেবে গবেষণায় অংশ নেন মোস্তাক আহমেদ, আলাউদ্দিন খান ও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। বছরজুড়েই চাষ ও ফলনের উপযোগী বারি চিভ-১ নামের একটি জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন তাঁরা। চিভকে ঘিরে অনেকটা পেঁয়াজ-রসুনের বিকল্প তৈরিতে আশার সঞ্চার হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান, চিভের স্বাদ অনেকটা দেশীয় মসলা পেঁয়াজ–রসুনের মতো। চিভ হজমে সাহায্য করে, রোগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর মধ্যে ক্যানসার–প্রতিরোধী গুণাগুণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, নায়াসিন, ক্যারোটিন ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান। চিভ সাধারণত দেশের পাহাড়ি এলাকা সিলেট ও চট্টগ্রামে চাষ হয়। দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরা, বগুড়া ও লালমনিরহাটে চিভ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। একবার চিভগাছ লাগালে দীর্ঘদিন ফল পাওয়া যায়। বাড়ির আঙিনায় বা টবে এই ফসলের চাষ করা যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৭–এর তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে বার্ষিক পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৭ দশমিক ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদা ২২ লাখ মেট্রিক টন। বাকি পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে চিভ ব্যবহার করলে আমদানিনির্ভরতা কমে আসবে। চিভ সারা বছর ধরেই চাষ করা যায়।

দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটানোর লক্ষ্যে কৃষিবিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালে বারি-১ নামের উচ্চফলনশীল চিভের জাত অবমুক্ত করা হয়। ইতিমধ্যে এই চাষ সম্প্রসারণে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে, পাতার দৈর্ঘ্য ২৩-৩০ সেন্টিমিটার। প্রতি হেক্টরে পাতা, গাছসহ উৎপাদন হয় ১০-১২ টন। চারা লাগানোর সময় থেকে ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু হয়। বছরে চার-পাঁচবার ফসল সংগ্রহ করা যায়।

মো. নূর আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চিভের স্বাদ পেঁয়াজ–রসুনের মতো। এটি পৃথিবীর অনেক দেশে সাধারণত স্যুপ, সালাদ ও চায়নিজে ব্যবহৃত হয়। এর পাতা লিলিয়ান আকৃতির ফ্ল্যাট, কিনারা মসৃণ ও এর ভালভ লম্বা আকৃতির। চিভ হজমে সাহায্য ও রোগ নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে ক্যানসার–প্রতিরোধী গুণাগুণও বিদ্যমান রয়েছে পেঁয়াজ–রসুনের বিকল্প হিসেবে আদর্শ একটি মসলাজাতীয় ফসল চিভ।