পেট চালাতে ভিক্ষা করেন কামিনী, পাননি বয়স্ক ভাতা

কামিনী মহন্ত
ছবি: প্রথম আলো

চোখে ঝাপসা দেখেন কামিনী মহন্ত। শরীরে নেই তেমন শক্তি। লাঠির ওপর ভর করে চলতে হয় তাঁকে। দুমুঠো ভাতের জন্য এবাড়ি–ওবাড়ি ভিক্ষা করেন। ভিক্ষা পেলে ভাত মেলে, না হলে উপোস করতে হয়। সরকার তারাগঞ্জ উপজেলায় শতভাগ বয়স্ক ভাতার ঘোষণা দিলেও কামিনীর ভাগ্যে তা জোটেনি।

তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের শাহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কামিনী মহন্তের সহায়-সম্বল কিছু নেই। অভাবের কারণে ১৫ বছর আগে স্ত্রী সুফলা রানী দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর বাবার বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার টেপা দলিরাম গ্রামে চলে গেছেন। কামিনীর দুই ভাই থাকলেও অভাবের কারণে কামিনীকে খাওয়াতে পারেন না। শাহপাড়া গ্রামের পাশে যমুনেশ্বরী নদীর ধারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্যানেলে পলিথিনের খুপরিতে এখন বাস তাঁর। কামিনী মহন্তের ছোট ভাই গণেশ মহন্তের বয়স জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ৬৬ বছরের বেশি। তিনি বয়স্ক ভাতা পেলেও বড় ভাই কামিনী তা পান না।

বুধবার শাহপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত ক্যানেলের ধারে পলিথিনের খুপরি ঘরে বসে আছেন কামিনী মহন্ত। রোগ-শোকে তাঁর শরীর জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘মোর খুব কষ্ট। এ্যালা এবাড়ি–ওবাড়ি বেড়ার পাও না। মোক খাবারও কায়ও দেয় না। বস্কক ভাতাও পাও না। বয়স্ক ভাতার কথা কইলে মেম্বার-চেয়ারম্যান ভোটের কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) চায়। কিন্তু মোর তো কোনো কার্ড নাই। তোমরায় মোর বাপ-মাও, মোক খায়াপড়ি বাচির ব্যবস্থা করি দেও। একটা বয়স্ক ভাড়া করি দেও। ভিক্ষা করি শরীর চলে না।’

ওই গ্রামের তাপস চন্দ্র বলেন, কামিনী মহন্তের মতো হতদরিদ্র লোক এই গ্রামে আর নেই। অভাবের কারণে ১৫ বছর আগে স্ত্রী-সন্তান তাঁকে ফেলে চলে গেছেন। দয়া করে গ্রামবাসী কিছু দিলে তাঁর খাবার জোটে, না হলে অনাহারে দিন কাটে। তাঁর বয়স্ক ভাতা হওয়া প্রয়োজন।

ইকরচালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, ‘কামিনীর অবস্থা খুবই করুণ। গ্রামবাসীর দান-দক্ষিণায় তাঁর জীবন টিকে আছে। বিভিন্ন উৎসবে সরকার হতদরিদ্রদের জন্য ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দিলে তা কামিনীকে দিই। কামিনীর ছোট ভাই গণেশ মহন্তকে বয়স্ক ভাতার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করতে পারলেও কামিনীর জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তাঁর নাম বয়স্ক ভাতার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করতে পারিনি।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহামুদুল হক বলেন, জনপ্রতিনিধিরাই বয়স্ক ভাতার তালিকা করে থাকেন। তাঁরা কামিনী মহন্তের নাম না পাঠানোয় বয়স্ক ভাতার তালিকায় তাঁর নাম অর্ন্তভুক্ত হয়নি।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, নতুন ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম সব সময় চালু আছে। ওই ব্যক্তির বাবা, মা অথবা ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, জন্মসনদ, চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র ও নাগরিক সনদ নিয়ে নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করলে ভোটার তালিকায় তাঁর নাম হালনাগাদ করা হবে।