পেটে গজ রেখে সেলাই: সেই চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ বাতিল, দুই নার্সকে নোটিশ
বরিশাল শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে এক প্রসূতির অস্ত্রোপচারের পর পেটের ভেতরে গজ রেখে সেলাই করার ঘটনায় ছয় মাসের প্রশিক্ষণে থাকা হাসপাতালের অনারারি চিকিৎসক মো. তারেকের প্রশিক্ষণ বাতিল করা হয়েছে।
একই সঙ্গে হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স মিতু রানী দাস ও সুমী সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দুজনকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
এর আগে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও দুই জ্যেষ্ঠ নার্সের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে গতকাল শনিবার প্রতিবেদন দেয় এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। এরপর আজ রোববার ওই তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় প্রশিক্ষণে থাকা চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া দুই নার্সকে কারণ দর্শানোর জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ–সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের অনুলিপি মহাপরিচালকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গতকাল তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির জমা দেওয়া প্রতিবেদনে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দায়িত্বহীন কাজ যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সজাগ থাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করা হয়। কমিটির অন্যতম সদস্য ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কর্তব্যে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রসূতি শারমিন আক্তার ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌর শহরের বাসিন্দা জিয়াউল হাসানের স্ত্রী। জিয়াউল হাসান জানান, গত ১৬ এপ্রিল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে অস্ত্রোপচারের (সিজারিয়ান) মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দেন তাঁর স্ত্রী শারমিন। বাড়ি ফেরার কিছুদিন পর তাঁর পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। একপর্যায়ে তাঁর পেট ফুলে যায় ও অস্ত্রোপচারের স্থানটিতে ক্ষতের সৃষ্টি যায়। ওই ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বের হচ্ছিল।
পরে গত ৩০ মে অবস্থা গুরুতর হলে তাঁকে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সার্জারি বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন, শারমিনের পেটের ভেতর গজ রয়ে গেছে। এরপর ওই দিনই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই গজ অপসারণ করেন সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নাজিমুল হক।
নাজিমুল হক ওই সময় বলেছিলেন, দীর্ঘদিন পেটের মধ্যে গজ থাকায় ভেতরে পচন ধরে নাড়ি ফুটো হয়ে গেছে শারমিনের। আবার অস্ত্রপচারের মাধ্যমে গজ বের করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ‘পেটে গজ রেখে সেলাই, দেড় মাস পর অপসারণ’ শিরোনামে ১ জুন প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।
সেটিসহ ওই ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত অন্যান্য প্রতিবেদন যুক্ত করে ৬ জুন হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী জীবন নেছা মুক্তা। এরপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বুধবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করেন। একই সঙ্গে ওই রোগীর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।