পৌরসভা নিবার্চন: কাটাখালীর গলার কাঁটা জলাবদ্ধতা

রাজশাহী কাটাখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট এমনি কাদাপানিতে ভরা। এলাকাবাসীকে কাদাপানি মারিয়ে চলাচল করতে হয়। সোমবার দুপুরে কাটাখালী বাজার এলাকায়
প্রথম আলো

হামিদা বেগমের বাড়ি থেকেই দেখা যায় রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক। সড়ক দিয়ে দিনে–রাতে চলাচল করা বাস-ট্রাকের হর্নও শোনা যায়। কিন্তু তাঁর বাড়ি থেকে সরাসারি এই মহাসড়কে উঠতে গেলে এখনো জুতা খুলতে হয়। বর্ষাকাল শেষ হলেও তাঁদের মহল্লা জলাবদ্ধ। পৌরসভার কোনো রাস্তা না থাকায় কাদার ভেতর দিয়েই তাঁদের চলাচল করতে হয়। বিকল্প পথে আসতে গেলে আধা কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়।

হামিদা বেগম জানান, নির্বাচনের সময় এলে সবাই এসে বলেন, ভোটে পাস করলে রাস্তা করে দেবেন। পানি নামানোর ব্যবস্থাও করে দেবেন, কিন্তু এখনো সেই অবস্থাই রয়েছে।

২০০২ সালে রাজশাহীর পবা উপজেলার একটি অংশ নিয়ে কাটাখালী পৌরসভা গঠন করা হয়। এর আয়তন ২৫ বর্গকিলোমিটার। ২০১৫ সালের নির্বাচনের আগপর্যন্ত এই পৌরসভার মেয়র ছিলেন জামায়াত নেতা মাজেদুর রহমান। শুরুতে প্রশাসকও ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আব্বাস আলী মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। এবারও মাজেদুর রহমান প্রার্থী হয়েছেন। আগামী ২৮ ডিসেম্বর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এই দুজনসহ মেয়র পদে লড়ছেন চারজন।

রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আব্বাস আলী নিজের মুখেই স্বীকার করলেন এই সমস্যার কথা। তিনি বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি খাল পৌর এলাকার বুক চিরে চলে গেছে। এত দিন তারা এই খাল সংস্কার করেনি। যে কারণে পৌর এলাকার পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে পৌর কর্তৃপক্ষের কিছুই করার ছিল না। এখন খালের সংস্কার হচ্ছে। আর এ সমস্যা থাকবে না।

সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সেই খালের সংস্কার এবং পাকা নালার নির্মাণকাজ চলছে। রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক থেকে নেমে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে যেতে দেখা গেল, এখনো বিস্তীর্ণ এলাকা জলাবদ্ধ রয়েছে। কাদাপানি ভেঙেই এলাকার মানুষ চলাচল করছে।

বর্ষার সময় কলাগাছ ফেলে তাঁদের চলাচল করতে হয়। অথচ তাঁরা পৌরসভার ভোটার।
হেনা বেগম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এই পৌরসভার কোনো ওয়ার্ডেই এখনো পানিনিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ–ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। মহল্লায় পাকা রাস্তাও নির্মাণ করা হয়নি। শুধু প্রধান সড়কের কাজ হয়েছে। সব সড়কে সড়কবাতিও নেই। পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও নেই।

রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের পাশেই রয়েছে কাটাখালী নতুন সিনেমা হল (বর্তমানে বন্ধ)। এর পেছনের এলাকা হচ্ছে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের অবস্থাও ৫ নম্বরের মতোই। এই ওয়ার্ডের এক যুবক জুয়েল হাসান বললেন, রোদে না শুকালে এই ওয়ার্ডের পানি বের হওয়ারও কোনো রাস্তা নেই, মানুষের চলাচলেরও কোনো রাস্তা নেই। বছরের অর্ধেক সময় এলাকার মানুষকে কাদাপানির ভেতর দিয়ে চলতে হয়। এলাকার জাকির হোসেনের স্ত্রী হেনা বেগম (৫০) বলেন, বর্ষার সময় কলাগাছ ফেলে তাঁদের চলাচল করতে হয়। অথচ তাঁরা পৌরসভার ভোটার।

রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মধ্য দিয়ে যাওয়া বিএমডিএর খালে সংস্কারকাজ চলছে। সোমবার দুপুরে কাটাখালী বাজার এলাকায়
ছবি: শহীদুল ইসলাম

জলাবদ্ধতার কারণে এই ওয়ার্ডের মুনসুর রহমান ও তাঁর ভাই মোহাম্মদ আলীর বাড়ির পাশের দুই বিঘা জমিতে আবাদ করতে পারেন না। মুনসুর আলীর ছেলে লাভলু বলেন, পানি জমে থাকার কারণে জমিতে এই জঙ্গল হয়েছে। পানি খালে নামানোর ব্যবস্থা করতে পারলেই জমিটাকে আবাদে তোলা যায় বা অন্য কাজে লাগানো যায়। পৌর এলাকার সদরের এত জমি এই জলাবদ্ধতার কারণে বেদামি হয়ে আছে।

এক সেলুনমালিক অবশ্য অন্য কথা বললেন। তাঁর ভাষ্যমতে, মানুষ এমন অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর করেছেন যে রাস্তা করার জায়গা বের করা যাচ্ছে না। এ জন্য মেয়র কিছু করতে পারছেন না। একজন ফল বিক্রেতা বললেন, পৌরসভার কোনো ওয়ার্ডেই পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। তাঁর বাড়িতে এবার এক সপ্তাহ পানি ঢুকে ছিল। রাস্তা থেকে পানি নেমেছে দুই মাস পর। তাঁর বাড়ি মধ্য কাটাখালী এলাকায়।

গেল মেয়াদে কী পরিমাণ উন্নয়ন বরাদ্দ পেয়েছেন, জানতে চাইলে মেয়র আব্বাস বলেন, তিনি তাঁর মেয়াদে আট কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ পেয়েছেন। তার ভেতর রাস্তাঘাটের পাঁচ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করেছেন। বাকিটা প্রক্রিয়াধীন। তিনি সাত-আট কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, খালের সংস্কার হয়ে যাচ্ছে। এবার ড্রেনেজ–ব্যবস্থার উন্নয়ন করা যাবে। অপরিকল্পিত বাড়িঘরের কারণে যেসব ওয়ার্ডে রাস্তার কাজ করা যায়নি। তাঁর পরিকল্পনা রয়েছে ড্রেন নির্মাণ করে তার ওপর দিয়ে রাস্তার কাজ করবেন। এভাবেই তিনি জলাবদ্ধতার সমস্যার সমাধান করবেন।