পৌষসংক্রান্তির মাছের মেলায় ৭৫ কেজির বাগাড়

পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে মাছের মেলায় ৭৫ কেজির এই বাগাড় মাছ নজর কাড়ছে সবার। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের নতুন বাজারে আজ বুধবার দুপুরেপ্রথম আলো

পৌষসংক্রান্তি বা মকরসংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। দিনটি উপলক্ষে নতুন ধানের চাল গুঁড়া করার ধুম পড়ে, ঘরে ঘরে তৈরি হয় নানান স্বাদের পিঠাপুলি। নদীমাতৃক গ্রামবাংলার কোথাও এখনো দিনটিতে বসে জমজমাট মাছের মেলা। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সে রকমই এক মাছের মেলায় সাড়া ফেলে দিয়েছে ৭৫ কেজির এক বাগাড়। বিক্রেতা মাছটির দাম হেঁকেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা!

যুগ যুগের ঐতিহ্য মেনে দিনব্যাপী এ মেলা বসেছে আজ বুধবার শ্রীমঙ্গল শহরের নতুন বাজারে। পৌষসংক্রান্তি কাল বৃহস্পতিবার হলেও পুরো মৌলভীবাজারে বিভিন্ন স্থানে গতকাল মঙ্গলবার থেকেই বসতে শুরু করেছে পৌষসংক্রান্তির মাছের মেলা। এসব মেলায় দূরদূরান্ত থেকে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় সব মাছ। এর বেশির ভাগই নদী-হাওর-পুকুরের দেশি মাছ। কোনো কোনোটি চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে ক্রেতাদের।

আজকের মেলায় এ রকমই একটি এই ৭৫ কেজির বাগাড়। মেলায় আসা সব মাছের মধ্যে সবার আকর্ষণ হয়ে উঠেছে বিশাল এই মাছ। মাছটি বাজারে এনেছেন হাফিজ আহমেদ নামের এক মাছ বিক্রেতা। দুপুর পর্যন্ত এই বাগাড়ের দাম উঠেছে ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রেতা হাফিজ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা না হলে মাছটি বিক্রি করবেন না পণ করেছেন। প্রত্যেকে একবার হলেও মাছটির কাছে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। কেনার সাধ্য না থাকলেও নজর বোলাতে তো অসুবিধা নেই!

পৌষসংক্রান্তি বা মকরসংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়।

হাফিজ বলেন, তাঁর আনা বাগাড় মাছটির ওজন ৭৫ কেজি। এই মাছটি মেঘনা নদী থেকে ধরা হয়েছে। মাছটির দাম ৮০ হাজার টাকা উঠলেও আরও বেশি দামে বিক্রির অপেক্ষায় আছেন তিনি। প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাবেন বলে তিনি মনে করছেন।

সকালে মাছবাজারে দেখা যায়, বাগাড়টি ছাড়াও বড় বড় রুই, কাতলা, বোয়াল নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া রয়েছে বাগাড়, চিতল, আইড়, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। ক্রেতা ও বিক্রেতার আগমনে জমে উঠেছে মাছের এই মেলা। উৎসবমুখর পরিবেশে একেকজন ক্রেতা মাছ কিনে হাসিমুখে হাঁটা ধরছেন বাড়ির পথ।

জোনাইদ মিয়া নামের এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে শ্রীমঙ্গল মাছবাজারে বড় বড় মাছ উঠেছে। এ মাছগুলো হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর ও মেঘনা নদী থেকে আনা হয়েছে।

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে কমলগঞ্জের শমশেরনগর বাজারে বসেছে এই মাছের মেলা। আজ বুধবার দুপুরে
প্রথম আলো

সনেট দেব চৌধুরী নামের এক ক্রেতা বলেন, সারা বছরের তুলনায় পৌষসংক্রান্তিতেই বেশি মাছ আসে। দূরদূরান্ত থেকে এখানে মাছ নিয়ে আসা হয়। এত বড় বড় মাছ একসঙ্গে সব সময় বাজারে ওঠে না। এই সময়ই পাওয়া যায় বলে ক্রেতা সমাগমও বেশি।

পৌষসংক্রান্তির মাছের মেলা বসেছে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর, শহীদনগর ও মুন্সীবাজারেও। মুন্সীবাজারে মাছের মেলা বসেছিল গতকাল। আজ সকাল থেকে মাছের মেলা বসেছে শমশেরনগর ও শহীদনগরে। সকাল থেকেই এই দুই মাছের মেলায় লেগেছে প্রচণ্ড ভিড়।

করোনা সংক্রমণের কারণে মৌলভীবাজারের শেরপুরে বৃহত্তর সিলেটের অন্যতম বৃহৎ মাছের মেলাটি এবার বসছে না। তাই এবার শমশেরনগরে ক্রেতাদের ভিড় বেশি।

সকালে শমশেরনগর মাছের মেলায় এক কোণে দেখা যায়, আড়তদার জোরে জোরে হাঁক দিচ্ছেন মাছের দাম। খুচরা বিক্রেতারা এসে কিনে নিচ্ছেন পছন্দের মাছ। আড়তদারের কাছে খুচরা ক্রেতাদের কেনার সুযোগ নেই। পাইকারি মাছ কিনে বিক্রেতারা তাঁদের থালায় সাজিয়েছেন বড় আকারের রুই, চিতল, কাতল, মৃগেল, কালবাউশ, বাউশ, গ্রাস কার্প, বোয়াল, পাবদা, শোল, গজার, তেলাপিয়া, আইড়, কমন কার্প (কার্পু), বাঘ মাছসহ নানা জাতের মাছ। মেলায় সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের রুই, বোয়াল, চিতল, কার্প, আইড় ও বাঘ মাছ উঠেছে।

এসব বড় মাছের একেকটির দাম চাওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তবে কেজি হিসাবে চাচ্ছেন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। শমশেরনগর মাছের মেলায় আসা ক্রেতা অলক সাহা ও বাচ্চু সেন শর্ম্মা বলেন, পৌষসংক্রান্তিতে বাসায় তৈরি হয় নানা ধরনের পিঠাপুলি। তার সঙ্গে মেলা থেকে বড় আকারের পছন্দের মাছ না কিনলে উৎসব জমে না।

পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে কমলগঞ্জের শমশেরনগর বাজারে বসেছে এই মাছের মেলা। আজ বুধবার দুপুরে
প্রথম আলো

একই কথা জানান স্বপন ও সুজিত দেবনাথ নামের আরও দুই ক্রেতা। তাঁরা বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে মৌলভীবাজারের শেরপুরে বৃহত্তর সিলেটের অন্যতম বৃহৎ মাছের মেলাটি এবার বসছে না। তাই এবার শমশেরনগরে ক্রেতাদের ভিড় বেশি।

মাছের মেলায় দেখা যায়, যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা পছন্দমতো বড় আকারের মাছ কিনছেন। আর স্বল্প আয়ের মানুষজন তুলনামূলক ছোট আকারের মাছ কিনছেন।
শমশেরনগর মাছের মেলায় মাছ বিক্রেতা মানিক মিয়া ও আবদুল মন্নান জানান, পৌষসংক্রান্তি কাল হলেও এখানে আজ গভীর রাত পর্যন্ত এক দিনব্যাপী মাছের মেলা থাকবে। দেশের বিভিন্ন হাওর অঞ্চল, ভৈরব, চাঁদপুর, ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে এখানে মাছ আনা হয়েছে।

মুন্সীবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল সাপ্তাহিক হাটবার বলে সেখানে সেদিনই এক দিনের মাছের মেলা বসেছিল। পতনঊষার ইউনিয়নের শহীদনগর বাজারেও আজ ছোট আকারে পৌষসংক্রান্তির মাছের মেলা বসেছে।