প্যান্ট চুরির পর ছাত্রলীগ নেতা বললেন, তিনি ‘অপ্রকৃতিস্থ’ ছিলেন

রাজশাহী জেলার মানচিত্র

রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে দোকান থেকে প্যান্ট চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে গত রোববার সন্ধ্যায় জেলার তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া বাজারে সালিস হয়েছে। সেখানে ছাত্রলীগের নেতা দাবি করেছেন যে তিনি ওই সময় অপ্রকৃতিস্থ ছিলেন। এ জন্য টাকা দেওয়ার কথা মনে ছিল না। সালিসে তাঁর কাছ থেকে প্যান্টের দাম নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গত শনিবার তানোর পৌর এলাকার প্রদীপ সুপার মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে। মার্কেটের সিসিটিভির ফুটেজে ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ছাত্রলীগের ওই নেতার নাম মিজানুর রহমান ওরফে জুয়েল রানা। তিনি তানোর উপজেলার চাপড়া মিরাপাড়া এলাকার মুনতাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

এ নিয়ে গত রোববার সন্ধ্যায় জেলার তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া বাজারে সালিস হয়েছে। সালিসে ছাত্রলীগের নেতা নিজের অপরাধ স্বীকার করেন। পরে তাঁর কাছ থেকে প্যান্টের দাম ৩২০ টাকা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দুজন ক্রেতা দোকান থেকে বেরিয়ে যান। ওই সময় ছাত্রলীগের নেতা দোকানের সামনে এসে বাইরে টাঙানো একটি জিন্সের প্যান্ট নামান। পরে সেই প্যান্ট নিয়ে সোজা মার্কেট থেকে বেরিয়ে যান।

দোকানমালিক প্রসেনজিৎ কুমার জানান, দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত তিনি দোকানের বাইরে ছিলেন। এ সময় দোকানে ছিলেন তাঁর ছোট ভাই। তিনি এসে বাইরে ঝোলানো দুটি প্যান্টের একটি পাননি। তাঁর ভাইও বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি। অনেক খুঁজে সন্ধান না পেয়ে পরদিন পাশের দোকানে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ দেখেন। সেখানেই ছাত্রলীগের নেতার প্যান্ট চুরির ঘটনা ধরা পড়ে।

পরে তিনি নিজেই কথা বলেন ছাত্রলীগের ওই  নেতার সঙ্গে। প্রথমে তিনি চুরির ঘটনা অস্বীকার করেন। বিষয়টি বাজার বণিক সমিতির নেতাদের জানালে ওই দিন সন্ধ্যায় গোল্লাপাড়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাপুল সরকারের চেম্বারে সালিস বসে। সেখানে ছাত্রলীগের নেতা নিজের অপরাধ স্বীকার করেন। পরে তাঁর কাছ থেকে প্যান্টের দাম ৩২০ টাকা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ওই নেতাকে সালিসে বলা হয়েছে যে, তুমি ছাত্রলীগের কলঙ্ক। তুমি আর কোথাও নিজেকে ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ো না।
পাপুল সরকার, গোল্লাপাড়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক

তবে ছাত্রলীগের নেতা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই সময় তিনি অপ্রকৃতিস্থ ছিলেন। তাঁকে সিগারেটের সঙ্গে নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছিল। তারপর তিনি অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় প্যান্ট নিয়ে গেছেন। কে নেশাবস্তু খাইয়েছে, জানতে চাইলে তিনি তাঁদের নাম বলতে পারেননি। তিনি দাবি করেন, তিনি হাটের ঠিকাদারি করেন। তাঁর পকেটে সব সময় লাখ লাখ টাকা থাকে। ঘটনার সময়ও তাঁর কাছে ৬৫ হাজার টাকা ছিল। তিনি বলেন, যে প্যান্ট তিনি নিয়ে গেছেন, সে প্যান্ট তাঁর কর্মচারীরাও পরেন না। তিনি সব সময় রাজশাহী শহরে কেনাকাটা করেন। তিনি বলেন, তাঁর কোমরের মাপ হচ্ছে ২৮ ইঞ্চি। কিন্তু যে প্যান্ট নিয়ে গেছেন, সেটি হচ্ছে ৪২ ইঞ্চির। এতে বোঝা যায়, তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না।

বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি। ওই নেতার বিরুদ্ধে তাঁরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
হাবিবুর রহমান, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক

গোল্লাপাড়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক পাপুল সরকার বলেন, সালিসে তিনি নেশার ঘোরে নিয়ে যাওয়ার কথা দাবি করেছেন। কিন্তু ভিডিও ফুটেজ দেখে তেমনটি মনে হয়নি। তিনি দোষ স্বীকার করে সবার সামনে ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁকে পুলিশে দিতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু দোকানমালিক রাজি হননি। এ জন্য শুধু তাঁর প্যান্টের দামটা আদায় করে দেওয়া হয়েছে। পাপুল সরকার বলেন, ওই নেতাকে সালিসে বলা হয়েছে যে ‘তুমি ছাত্রলীগের কলঙ্ক। তুমি আর কোথাও নিজেকে ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ো না।’

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি ফেসবুকে দেখেছেন। তাঁকে কেউ বলেননি। ওই নেতার বিরুদ্ধে তাঁরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন।