প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ যাচ্ছে একজনের হাতে

সওজ ঠিকাদারের যোগ্যতা বিবেচনায় নেয় ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি মেনে। এতে যাঁর অভিজ্ঞতা বেশি, তিনি কাজ পান। নতুনদের সুযোগ নেই।

  • মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ পান অন্যরা।

  • এ ক্ষেত্রে খরচ করতে হয় বেশি। লাভ করতে গিয়ে কাজের মান ঠিক থাকে না।

ছবি: সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের পিএমপি (পিরিয়ডিক মেইনটেন্যান্স প্রোগ্রাম) প্রকল্পে ক্ষুদ্র সড়ক মেরামত কাজে ১২ গ্রুপে প্রায় ৬ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর সব কটিই পেয়েছেন একজন ঠিকাদার। আমিনুল হক নামের ওই ঠিকাদার খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় একই প্রকল্পের প্রায় এক শ গ্রুপ কাজের অধিকাংশই পেয়েছেন।

কাজ না পাওয়া পাঁচজন ঠিকাদার বলেন, সওজের ম্যাট্রিক্স পদ্ধতির কারণে এক প্রকল্পের সব কাজ যাচ্ছে একজনের হাতে। তিনি আবার সে কাজ তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করছেন। সে কাজ পেতে অধিক টাকা দিতে হচ্ছে। বেশি টাকায় কাজ নিয়ে তৃতীয় পক্ষ লাভ করতে গিয়ে কাজের সঠিক মান ধরে রাখতে পারছে না।

সওজের প্রকৌশলী পদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে সওজ ঠিকাদারের যোগ্যতা বিচার করে। এ পদ্ধতিতে আগের কাজের অভিজ্ঞতা, সর্বোচ্চ কত টাকায় কাজ করেছেন ও কত বেশি কাজ চলমান আছে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়। ফলে যিনি এসব যোগ্যতার শর্ত পূরণ করতে পারেন, তিনিই কাজ পান। ছোট ঠিকাদারেরা সুযোগ পান না। আমিনুল হকের কাজ পাওয়ার বিষয়েও সওজের কর্মকর্তারা একই কথা বলছেন।

তবে কাজ বিক্রি করার বিষয়ে আমিনুল হক বলেন, এ কথা ঠিক না। সম্পর্কের কারণে কিছু কাজ অন্যদের দিয়েছেন। আবার তিনি একাই প্রকল্পের বেশি কাজ পাচ্ছেন, তা–ও ঠিক না।

জেলার ওই পাঁচ ঠিকাদার বলেন, সরকারের অন্য সব দপ্তর দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে এলটিএম (লোকাল টেন্ডার মেথড) পদ্ধতি ব্যবহার করে। এতে শুধু লাইসেন্স থাকা ঠিকাদারেরা অংশ নিতে পারেন।

ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগে কাজ করেন এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবার জেলায় প্রায় ৬ কোটি টাকার ১২ গ্রুপের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কাজগুলো সবই পেয়েছেন নওগাঁর ঠিকাদার আমিনুল হক। তিনি কাজগুলো ছোট ছোট ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সওজের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, কাজের গুণগত মান ধরে রাখতে ঠিকাদার নির্বাচনে সওজ কিছু নিয়ম মেনে চলে। ক্ষুদ্র মেরামত কাজের ক্ষেত্রে ওটিএম (ওপেন টেন্ডার মেথড) ব্যবহার করা হয়। এতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ঠিকাদারেরা অংশ নিতে পারেন। অভিজ্ঞরা ভালো কাজ করবেন, এমন প্রত্যাশা থেকে এই পদ্ধতি মেনে চলা হয়। তবে একজন ঠিকাদারের পক্ষে সব কাজ করা কঠিন। যে কারণে তিনি ছোট ঠিকাদারদের কাছে কাজগুলো বিক্রি করেন। এতে শেষ পর্যন্ত অযোগ্যদের হাতেই কাজ চলে যায়।

ঝিনাইদহ জেলা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মুকুল জ্যোতি বসু বলেন, এই পদ্ধতি সওজের প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্তে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর সওজের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জর্জিস হোসেন বলেন, এ পদ্ধতি থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা তা নিয়ে ভাবছেন।