প্রকল্পের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে চেয়ারম্যান-ইউপি সদস্যের ফোনালাপ ফাঁস

দুর্নীতি
প্রতীকী ছবি

বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সুবিধাবঞ্চিত অতিদরিদ্র শ্রমিকদের দিয়ে কাজ না করিয়ে অর্থ ভাগাভাগির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। উপজেলার জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যের মধ্যে ফোনালাপ প্রকাশ পেলে বিষয়টি সামনে আসে।

গত বুধবার বিকেলে মো. জুনায়েদ সিদ্দিক নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে জল্লা ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্যের কথোপকথনের একটি অডিও পোস্ট করা হয়। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জল্লা ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য দীপালি হালদার একাধিক সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন—উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণতি বিশ্বাসের কাছে অভিযোগ করেন ইউপি চেয়ারম্যান বেবী রানী হালদার। ইউএনও লিখিত অভিযোগ স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরে পাঠালে দীপালিকে হালদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে দীপালি চেয়ারম্যান বেবীকে মুঠোফোনে কল করেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির টাকা ভাগাভাগির বিষয়টি প্রকাশ পায়।

ওই ফোনালাপে শোনা যায়, ইউপি সদস্য দীপালি হালদার চেয়ারম্যানকে বলছেন, ‘আপনি ইউএনওর কাছে আমার নামে প্রস্তাব দিয়েছেন কেন? আপনি যে টাকা চাইছেন, আমি আপনাকে ৭০ হাজার টাকা দিছি। আগেরবার কর্মসূচির ৫০ হাজার টাকা দিছি। আমি কি আপনারে কম টাকা দিছি? তারপরেও কেন অভিযোগ দিলেন?’ উত্তরে চেয়ারম্যান বেবী বলেন, ‘৭০ হাজার দেও, আর ৯০ হাজার টাকা দেও, সেটা কোনো বিষয় না। তোমার হিসাবে কত আসে, সেটাই দিতে হবে। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা লিখে দিছেন, চেয়ারম্যানের প্রজেক্টে ১ লাখ ১০ হাজার, আর তোমার প্রজেক্টে ৯০ হাজার।’ তখন দীপালি বলেন, ‘আমি একবার ৭০ হাজার টাকা, পরে ৫০ হাজার টাকা দিছি। ওই কাজে আমি মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিছি।’ চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে ওই সদস্যকে বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান হইয়া ৭০ হাজার টাকা দিতে পারছি, আমার স্বামী (নিহত চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালাদার নান্টু) এত টাকা দেনা রেখে গেছেন। আমি সেগুলো দিতে পারছি, আর তোমরা মেম্বার হইয়া দিতে পারবা না!’

ইউপি সদস্য দীপালি হালদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফোনালাপের কণ্ঠ আমার। তবে এটি কীভাবে ফাঁস হলো, সেটা আমি জানি না।’ তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যানের আনা অভিযোগ সত্য নয়।

এসব বিষয়ে জল্লা ইউপির চেয়ারম্যান বেবী রানী হালদার দাবি করেন, ইউপির অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মহিলা সদস্য দীপালি হালদারকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অয়ন সাহা বলেন, ‘আমার বরাত দিয়ে অন্য কেউ ঘুষ চাইলে তার দায় আমার না। তবে এ ধরনের ঘটনার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জল্লা ইউপির চেয়ারম্যান বেবী রানী হালদারের কাছে ঘুষের টাকা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে উজিরপুরের ইউএনও প্রণতি বিশ্বাস বলেন, ‘চেয়ারম্যান মিথ্যা ও বানোয়াট কথা বলেছেন। তাঁর সঙ্গে ওই প্রকল্প নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তা ছাড়া কোনো কাজেই অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। প্রকাশিত ফোনালাপের অডিও রেকর্ডটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’