প্রকৌশলীর সঙ্গে বিবাদে কর্মকর্তা পরিষদ, কঠোর আন্দোলনের হুমকি

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তাকে বদলির জেরে প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে কর্মকর্তা পরিষদের (অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন) বিরোধ তৈরি হয়েছে। বিরোধের জেরে প্রকৌশল বিভাগ এক দিনের কর্মবিরতি পালন করেছে এবং কর্মকর্তা পরিষদ ছয় দফা দাবি তুলে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। স্মারকলিপিতে ২০ জুনের মধ্যে দাবি না মানলে কর্মকর্তা পরিষদ কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।

প্রকৌশল বিভাগের দাবি, এক কর্মকর্তার বদলির অভিযোগ তুলে কর্মকর্তা পরিষদের নেতারা প্রধান প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করেছেন। প্রতিবাদ হিসেবে তারা কর্মবিরতি পালন করেছে। অন্যদিকে কর্মকর্তা পরিষদ বলছে, প্রধান প্রকৌশলী অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে এক কর্মকর্তাকে বদলি করায় তারা প্রতিবাদ করেছে। কাউকে লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

কর্মকর্তা পরিষদের ছয় দফা দাবিগুলো হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া প্রধান প্রকৌশলীকে অব্যাহতি দিয়ে স্থানীয় কর্মকর্তা নিয়োগ, কর্মকর্তা নিয়োগবিধি সংশোধন, কর্মকর্তা হিসেবে তিনটি পদোন্নতি প্রদান, কর্মকর্তাদের উচ্চতর স্কেল প্রদান, মেয়াদ পূর্ণ হওয়া কর্মকর্তাদের পদোন্নতি এবং আইসিটি সেলের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন। দাবিগুলো না মানা হলে ২০ জুন থেকে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলীকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে বারবার কল দেওয়া হলে তা ব্যস্ত দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্মারকলিপিটি গ্রহণ করে আমরা উপাচার্য মহোদয়কে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি শনিবারে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। আশা করছি, দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে।’

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলী বিভিন্ন অনিয়ম করছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মেডিকেল সরঞ্জাম কিনেছেন, যেগুলো নিম্নমানের। ফলে স্টোরের দায়িত্বরত পরিচালক রফিকুল ইসলাম পণ্যগুলো বুঝে নেননি, বিল ভাউচারে স্বাক্ষরও করেননি। ফলে প্রধান প্রকৌশলী তাঁকে কৌশলে বদলি করেছেন।
হারুণর রশিদ, সভাপতি, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। এই প্রকল্প থেকে সুবিধা নিতে সব পক্ষই মরিয়া হয়ে উঠেছে। অনৈতিক বিভিন্ন সুবিধা নিতে একে অপরের বিরুদ্ধে লাগছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে কর্মকর্তাদের বিরোধ তৈরি হয়েছে। এই বিরোধের জেরেই গত মঙ্গলবার কর্মকর্তারা প্রধান প্রকৌশলীর পথ আগলে গাড়ির চাবি কেড়ে নেন। প্রতিবাদে পরদিন প্রকৌশল বিভাগ এক দিনের কর্মবিরতি পালন করেছে। অন্যদিকে কর্মকর্তা পরিষদ প্রধান প্রকৌশলীকে অব্যাহতি প্রদানসহ ছয় দফা দাবি তুলে আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে।

প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোরের এক কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। কিন্তু কর্মকর্তা পরিষদ এই বদলির জন্য তাঁকে দায়ী করেছে। সোমবার তারা তাঁর কার্যালয়ে এসে গালিগালাজ করেছে। একপর্যায়ে তিনি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে গেলে গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে হয়রানি করেছে। পরবর্তী সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সহকর্মীদের বিষয়টি জানিয়েছেন। আইনগত ব্যবস্থা নেননি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঝামেলা বাড়াতে চাই না। তাই চুপচাপ আছি। চুপচাপই থাকব। আমার কিছু বলার নেই।’

কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি হারুণর রশিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের শুরু থেকেই বিভিন্নভাবে দুর্নীতির চেষ্টা চলছে। উপাচার্য এম রোস্তম আলী কাজের শুরুতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত প্রকৌশলী আবদুর রহিমকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক উঠলে তাঁকে বাদ দিয়ে আবার নিজের পছন্দের আমিনুল ইসলামকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত এই প্রকৌশলী বিভিন্ন অনিয়ম করছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মেডিকেল সরঞ্জাম কিনেছেন, যেগুলো নিম্নমানের। ফলে স্টোরের দায়িত্বরত পরিচালক রফিকুল ইসলাম পণ্যগুলো বুঝে নেননি, বিল ভাউচারে স্বাক্ষরও করেননি। ফলে প্রধান প্রকৌশলী তাঁকে কৌশলে বদলি করেছেন। ঘটনা জানার পর কর্মকর্তা পরিষদ এর প্রতিবাদ করেছে। তারা কাউকে লাঞ্ছিত করেনি।

কর্মকর্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত পাঁচজন প্রকৌশলী রয়েছেন। এরপরও চুক্তিভিত্তিক প্রকৌশলী নিয়োগ করা একটি অপচয়। আমরা অবিলম্বে এই প্রকৌশলীর অব্যাহতি চাই। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে।’