প্রতিটি সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের দায়িত্ব সরকারের

হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকা, রাজশাহী, ২৪ মার্চ
ছবি: প্রথম আলো

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের শক্তি ২০০৮ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলছে। প্রতিটি ঘটনারই বিচার হতে হবে। আর এই বিচার করার দায়িত্ব সরকারের।

সুনামগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং হামলায় উসকানিদাতা হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে আয়োজিত  বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা এসব কথা বলেন।

বুধবার বিকেলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ওই সমাবেশের আয়োজন করে।

ফজলে হোসেন বলেন, ‘দেশে যদি সাম্প্রদায়িকতা হয়, এর বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। সরকারের দায়িত্ব পাল্টা জবাব দেওয়ার। সরকার যদি না পারে, তাহলে আমরা লড়াই করতে জানি। লড়াই চালিয়ে যাব।’

ফজলে হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিরঙ্কুশভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নির্বাচিত হয়েছি। এরপর থেকে বারবার হেফাজত, জামায়াত এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি বিদেশিদের প্ররোচনায় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেশের অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছে। বারবার সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে। সংখ্যালঘু আদিবাসী পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু সরকার সুনির্দিষ্টভাবে দায়ীদের চিহ্নিত করতে পারছে না। সুনামগঞ্জে যা হয়েছে, তা নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। যুবলীগের নাম উঠে আসছে। তাহলে সেই যুবলীগে হেফাজত কী করে ঢুকল, এটা আওয়ামী লীগকে দেখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছুদিন আগে বলেছিলেন, অনেক জামায়াত-বিএনপি এবং হেফাজত আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছে। হাইব্রিড ঢুকে পড়েছে। স্বাধীনতার শত্রুরাও যদি আমাদের মিছিলে ঢুকে পড়ে, তাহলে দেশের জনগণ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। তাই স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে, যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করছে, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় আক্রমণ করছে, তাদের চিহ্নিত করার জন্য একটা বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক। এই বাংলাদেশে যারা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এর কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আজকে কিছু শক্তি বিভিন্ন শক্তির মদদে এই দেশকে আবারও পাকিস্তানি ধারায় নিয়ে যেতে চায়। দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি সব জাতি, সব ধর্ম এবং বর্ণের মানুষের জন্য। বঙ্গবন্ধু সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু এখন একটা নতুন ষড়যন্ত্রের উত্থান হচ্ছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ধারা অব্যাহত থাকুক, এটা তারা চায় না। বাংলাদেশকে তারা আবার পাকিস্তান বানাতে চায়। আমরা পাকিস্তানের টেলিভিশন খুলে দেখেছি। পাকিস্তানের জনগণ বলে, আমাদের সামরিক শক্তিকে পরাভূত করে যে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করেছে সেই দেশ আজকে পাকিস্তানের চেয়ে উন্নত। আজকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়েও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল একটি রাষ্ট্র। এটা সম্ভব হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের কারণে। বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা, সেটাকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য একটা কুচক্রী মহল সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে চায়। আমরা মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’