প্রতিপক্ষের হামলায় আহত যুবলীগ কর্মী নিহত

ইউপি নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় পূর্ববিরোধ ও ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত মাসুদ মিয়া (৪৫) নামের এক যুবলীগ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে একটায় ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

মাসুদ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের খাগাতুয়া গ্রামের মঙ্গল মিয়ার ছেলে। তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর নবীনগর উপজেলার ২১টি মধ্যে ১৩টি ইউপিতে নির্বাচন হবে। মাসুদ ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ওরফে ভিপি মারুফের সমর্থক ছিলেন। এখানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন ওরফে শাকিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, খাগাতুয়া গ্রামের মাসুদ ও একই গ্রামের আলম মিয়ার গোষ্ঠীর লোকজনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েকটি মামলাও চলমান। ১৪ নভেম্বর উভয় পক্ষের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। স্থানীয় লোকজন থানা–পুলিশের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। আগামী ৪ ডিসেম্বর বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে সুরাহা করা হবে বলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নেন। সে পর্যন্ত উভয় পক্ষকে ঝগড়া থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা হয়।

ইউপি নির্বাচনে নিহত মাসুদ নৌকার প্রার্থী সৈয়দ জাহিদ হোসেনের বিপক্ষে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মোস্তফার পক্ষের কাজ করছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে ছয়টার দিকে খাগাতুয়া গ্রামের বাজারে একটি দোকানে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বসে চা খাচ্ছিলেন মাসুদ। ওই সময় দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ৮-১০ জন সমর্থক দা, ছুরি, রামদা নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাসুদের ওপর হামলা চালান।

একপর্যায়ে মাসুদকে সেখান থেকে তুলে খাগাতুয়ার পশ্চিমপাড়ায় নিয়ে যান। সেখানে মাসুদের দুই হাত ও দুই পায়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে একটি অটোরিকশা তুলে খাগাতুয়া বাজারে নিয়ে তাঁকে ফেলে দেন। পরে খাগাতুয়ার গ্রামের লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মাসুদকে প্রথমে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেলা পৌনে একটায় তিনি মারা যান।

নিহত ব্যক্তির মামাতো ভাই কাজী হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে আমরা দুজন বসে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ দুটি অটোরিকশায় করে ৮-১০ জন রামদা, ছুরি, বল্লম নিয়ে মাসুদের ওপর হামলা চালান। আত্মরক্ষার্থে ঘটনাস্থলে থেকে আমি পালিয়ে যাই। হামলাকারীরা তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। পায়ুপথের রাস্তা দিয়ে রড ঢুকিয়ে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ ছিল। তবে মাসুদ নৌকার বিরোধী প্রার্থীর গোলাম মোস্তফার সমর্থক ছিলেন। এ জন্যই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সৈয়দ জাহিদ হোসেন ও বিএনপির কর্মী স্থানীয় কাজী সিরাজুল ইসলাম পরিকল্পনা করেই মাসুদকে হত্যা করেন।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মোস্তফা মারুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা মাসুদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন। কারণ, মাসুদ আমার পক্ষে কাজ করছিলেন। আর খাগাতুয়া গ্রামের নির্বাচনে আমি বেশি ভোট পাব। মাসুদ থাকলে তাঁরা ভোট কাটতে পারবেন না। তাই তাঁরা তাঁকে হত্যা করেছেন।’

নৌকার প্রার্থী সৈয়দ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে রাজনীতি বা নির্বাচনের সম্পর্ক নেই। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ২০ বছর ধরেই ওই গ্রামের দলাদলি চলছে। যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিচার হওয়া উচিত। পূর্ববিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ববিরোধে জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা অনেককেই শনাক্ত করেছি। নিতহ মাসুদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল। ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের আটকের চেষ্টা চলছে।’