প্রতিবাদ জানিয়ে সুনামগঞ্জ শহরের শহীদ মিনারে ফুল দেননি মুক্তিযোদ্ধারা

সুনামগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে সেটিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আজ রোববার সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে
প্রথম আলো

সুনামগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও জমি নিয়ে করা মামলায় শহীদ মিনারের অস্তিত্ব অস্বীকারের প্রতিবাদে আজ রোববার সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেননি মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে অস্থায়ীভাবে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে সেখানে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

আজ সকাল আটটায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে ওই অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মুক্তিযোদ্ধারা। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত শহীদ মিনারে জেলা আওয়ামী লীগ, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা জাসদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডসহ বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ শহর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীমুক্ত হয়। ওই দিনই মুক্তিযোদ্ধারা শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এরপর ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে প্রথম ওই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বর্তমানে যে স্থানে শহীদ মিনার আছে, সেই স্থানে পূর্ব পাকিস্তান আমলে মুনসেফের বাসভবন ছিল—এই অজুহাতে গত বছরের জানুয়ারি মাসে শহীদ মিনার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এলাকাটি সংকুচিত করে ফেলা হয়। পাশাপাশি ওই এলাকায় রাতারাতি একটি মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধারা এতে বাধা দিলেও কোনো কাজ হয়নি। এরপর গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ এ বিষয়ে ক্ষোভ ও নিন্দা জানান। তাঁরা শহীদ মিনার এলাকা থেকে সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণের দাবি জানান। কিন্তু তাতেও লাভ না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন, ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন না। পরে বাধ্য হয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদ মিনারের পূর্ব পাশের কিছু স্থাপনা অপসারণ করা হয়। কিন্তু পশ্চিম পাশের সব স্থাপনা রয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, শহীদ মিনার এলাকায় দখল টিকিয়ে রাখতে জেলা জজ আদালতের নাজিরকে বাদী সাজিয়ে একটি স্বত্ব মামলা করা হয়েছে। ওই মামলার আরজিতে সুকৌশলে এখানে যে শহীদ মিনার আছে, সেটির উল্লেখ করা হয়নি।

বিষয়টিকে শহীদ মিনারের প্রতি অবমাননা উল্লেখ করে গত বছরের ৮ মার্চ শহরে মুক্তিযোদ্ধারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। পরে শহীদ মিনার কালো কাপড়ে ঢেকে দিয়ে সেখানে সমাবেশ করেন তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁরা শহীদ মিনার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন।

আজ সকালে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় অন্যদের মধ্যে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নুরুল মোমেন, প্রবীণ আইনজীবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ ও বিনোদ রঞ্জন তালুকদার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবু সুফিয়ান, সাবেক সদস্যসচিব মালেক হুসেন পীর, সদর উপজেলার সাবেক কমান্ডার আবদুল মজিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তবে এ বিষয়ে এর আগে সুনামগঞ্জ জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক শাখা থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছিল, ‘শহরে জেলা জজ আদালতের পুরোনো মুনসেফ বাসভবনের একাংশে ১৯৭১ সালে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভ এখনো সগৌরবে বহাল আছে। এই স্মৃতিস্তম্ভের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান রয়েছে। এর আশপাশে এমন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি, যা দ্বারা এই স্মৃতিস্তম্ভের সম্মান ও ঐতিহ্য ম্লান হতে পারে। স্মৃতিস্তম্ভের জায়গা বাদে পুরোনো মুনসেফ বাসভবনের বাকি অংশের জমি নিয়ে সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি স্বত্ব মামলা বিচারাধীন। কিছু অসাধু ব্যক্তি এসব জমিতে আটটি দোকানঘর নির্মাণ করলে সেগুলো ভেঙে দেওয়া হয়।