প্রতিশোধ নিতেই চোখ উপড়ে সরদারকে হত্যা

প্রতিপক্ষ সোমবার রাতে গৌরনগর গ্রামের মিলন সরকারকে হত্যা করে। সালিসে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত দিতেন। এ কারণে প্রতিপক্ষ তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।

হত্যা
প্রতীকী ছবি

পূর্ববিরোধ, খুনের প্রতিশোধ ও গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় মিলন সরকার নামের এক প্রবীণ গ্রাম্য সরদারকে খুন করা হয়েছে। ঘটনাস্থল নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের গৌরনগর গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গতকাল বুধবার দুপুরে আশুগঞ্জের লালপুর থেকে ১৫ জনকে আটক করেছে র‌্যাব।

নিহত মিলন সরকার (৮০) কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের গৌরনগর গ্রামের মৃত তালেব আলীর ছেলে, সরকারবাড়ির প্রধান ও গ্রামের সরদার ছিলেন। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি গ্রামের সালিস বৈঠকে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। সালিসে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত দিতেন। এ কারণে প্রতিপক্ষ তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। গত সোমবার রাতে প্রতিপক্ষের লোকজন চোখ উপড়ে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে তাঁকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দুই পক্ষ ও স্থানীয় লোকজন জানান, ১৯৮৩ সাল থেকেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গৌরনগর গ্রামের সরকারবাড়ি ও আজইরাবাড়ির লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। আজইরাবাড়ির নেতৃত্বে আছেন আব্বাস উদ্দিন। ২০১১ সালে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে সরকারবাড়ির রবিউল ইসলামকে (৩৫) হত্যা করেন। ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সরকারবাড়ির লোকজন প্রতিপক্ষের দুলাল মিয়া ও জয়নাল মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করেন। দুলালের সারা মুখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ক্ষত ছিল। গত সোমবার রাতে সরকারবাড়ির প্রধান মিলনকে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে গৌরনগর গ্রামে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে যোগ দিতে গেলে আজইরাবাড়ির ছানাউল্লাহ মিয়া নামের এক যুবককে সরকারবাড়ির কয়েকজন মারধর করেন। পরে সাড়ে ৯টা থেকে পৌনে ১০টার দিকে আজইরাবাড়ির লোকজন রামদা, চায়নিজ কুড়াল, চাপাতি, ছুরি, বল্লম, টেঁটা, দা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সরকারবাড়ির লোকজনের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে অন্তত ১০ জন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের লোকজন সরকারবাড়ির সরদার মিলনকে নদীর পাড়ে একা পেয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান। তাঁরা মিলনের দুটি চোখ উপড়ে ফেলেন এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নিহত মিলনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে মিলনের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, গৌরনগর গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মিলন সরকারের বসতঘরের টিনের বেড়ায় দায়ের কোপের বেশ কিছু চিহ্ন দেখা গেছে। পুলিশ সরকারবাড়ির আশপাশে টহল দিচ্ছে।

হত্যার ঘটনার বর্ণনা দেন মিলন সরকারের ভাতিজা সজীব সরকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় চাচাকে টেনে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। তখন চাচা আমাকে বলেন, “আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আমাকে কেউ মারবে না।” এ কথা বলার পর তিনি আমাকে শরীরের যত শক্তি আছে, তা দিয়ে দৌড় দিতে বলেন। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষ নদীর পাড়ে চাচাকে আটক করে। আমি চাচা মিলন সরকারের কাছ থেকে ২০ হাত দূরে নদীর পানিতে নেমে নিজেকে আড়াল করে বসেছিলাম। তারা চায়নিজ কুড়াল, চাপাতি ও ছুরি দিয়ে কাকাকে কুপিয়ে হত্যা করে।’