প্রথম নির্বাচন হলেও মানুষের আগ্রহ নেই

পৌরসভা নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

পঞ্চগড়ের নবগঠিত দেবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হবে ২০ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও গোটা পৌর এলাকায় নির্বাচনী উত্তাপ ছড়ায়নি। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ তেমন একটা নেই। তবে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা কর্মী–সমর্থকদের নিয়ে ঘুরছেন, ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। তাঁরা ভোট চাওয়ার পাশাপাশি দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। বৃহস্পতিবার পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

দেবীগঞ্জ পৌরসভার কয়েকজন ভোটার বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এ কারণে ভোটাররা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

দেবীগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার চেয়ে দেবীগঞ্জ শহরে প্রার্থীদের পোস্টারের সংখ্যা কম। শহরের চায়ের দোকানগুলোতে নির্বাচন নিয়ে মানুষ খুব বেশি আলোচনা করছেন না। তবে দুপুরের পর শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং শুরু হলেই মনে হয় নির্বাচন হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, দেবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী দেবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, দলটির ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুর নেওয়াজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও দলের দুই নেতা মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এফ এস এম মোফাখখারুল আলম ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সরকার ফরিদুল ইসলাম। এ ছাড়া মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাসুদ পারভেজ ও সাংবাদিক জাকারিয়া ইবনে ইউসুফ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ চার প্রার্থীকে ৫ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগ বহিষ্কার করেছে। তবে তাঁরা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ চার প্রার্থীকে ৫ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগ বহিষ্কার করেছে। তবে তাঁরা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ মেয়র প্রার্থী নুর নেওয়াজ বলেন, ‘যেভাবে সাড়া পাচ্ছি তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আমি বিপুলসংখ্যক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হব।’

আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার সকল কার্যক্রম বিবেচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ ছাড়া আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে করোনাকালে মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। যেভাবে সাড়া পাচ্ছি, তাতে মনে হচ্ছে নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হব।’

উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র প্রার্থী এফ এস এম মোফাখখারুল আলম বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আমি আশাবাদী যে মানুষ আমাকে মেয়র নির্বাচিত করবে। এখানে সরকারি দলের লোকজনের কিছুটা হুমকি-ধমকি আছে। তবে যেহেতু ইভিএম পদ্ধিতে ভোট গ্রহণ হবে, সে ক্ষেত্রে অনেক ভোটারই বোঝেন না কীভাবে ভোট দিতে হবে। এ বিষয়ে ভোটারদের প্রশিক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলে উপকৃত হব।’

আমরা সাধারণ ভোটাররা দল-মত বুঝি না। পৌরসভার উন্নয়ন করবে, এমন প্রার্থী দেখেই আমরা ভোট দেব।
ফারুক আহম্মেদ. ভোটার, কাচারীপাড়া এলাকা, দেবীগঞ্জ পৗরসভা

দেবীগঞ্জ পৗরসভার কাচারীপাড়া এলাকার ভোটার ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা সাধারণ ভোটাররা দল-মত বুঝি না। পৌরসভার উন্নয়ন করবে, এমন প্রার্থী দেখেই আমরা ভোট দেব। যে প্রার্থীর বাড়ির দরজা সবার জন্য সব সময় খোলা থাকবে, আমরা তাঁকেই গুরুত্ব দেব। এবার করোনার কারণে ভোটের তারিখ বারবার পেছানোর কারণে মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে আগ্রহটা কমে গেছে। এ জন্য নির্বাচনী আমেজ কিছুটা কম।’


পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রত্যয় হাসান বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। গতকাল থেকে প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ইভিএম পদ্ধতি ভোটারদের কাছে সহজ করার জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর প্রতিটি কেন্দ্রে মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হবে।

দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও দেবীডুবা ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে ২০১৪ সালে গঠিত হয় দেবীগঞ্জ পৌরসভা। সীমানা জটিলতায় এখানে দীর্ঘদিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার প্রথমবারের মতো এই পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। এর আগে গত  ১১ এপ্রিল ৯টি কেন্দ্রের প্রতিটিতেই ইভিএমে ভোট গ্রহণের কথা ছিল। পরে করোনা পরিস্থিতির কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। স্থগিত হওয়া এই ভোট গ্রহণ ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।