প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি ২ বছরেও চালু হয়নি

নেত্রকোনার খালিয়াজুরিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দুই বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি
প্রথম আলো

নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি দুই বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি। শুধু একজন চালকের অভাবে অ্যাম্বুলেন্সটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এতে সেবাপ্রত্যাশীসহ স্থানীয় মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, খালিয়াজুরি একটি বিচ্ছিন্ন হাওরাঞ্চল। ২৯৭ দশমিক ৬৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। জেলার ১০টি উপজেলায় ছোট-বড় ১৩৪টি হাওরের মধ্যে খালিয়াজুরিতেই ৮৯টি হাওর আছে। বছরের প্রায় সাত মাস ওই এলাকার মানুষ পানিবন্দী থাকে। জেলা সদরের সঙ্গে এখন পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। এ কারণে সড়ক পথে রোগী পরিবহন সম্ভব হয় না। তা ছাড়া সড়ক যোগাযোগ না থাকায় এই উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য আজ পর্যন্ত কোনো অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দও করা হয়নি।

নৌপথে জরুরি রোগী পরিবহনের জন্য উপজেলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত ২০১৭ সালের ১৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও দুস্থ মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্সের দাবি জানানো হয়। ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে খালিয়াজুরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনুকূলে প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ নৌযানটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। চালক না থাকায় এটি এক দিনও ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।

খালিয়াজুরির পুরাতনহাটি এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি ২০১৮ সালে খালিয়াজুরিতে আনার পর থেকে বানিয়াপাড়া খাদ্য গুদামসংলগ্ন এলাকায় পড়ে আছে। এখনো কোনো কাজে আসছে না। ব্যবহার ও যত্নের অভাবে দিন দিন এটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
খালিয়াজুরি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, খালিয়াজুরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত রোগীদের কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলার বেশির ভাগ রোগীকে চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে অথবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু বর্ষার ছয়-সাত মাস ট্রলার (ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকা) ছাড়া এখানকার রোগী পরিবহন সম্ভব হয় না। তিনি আরও বলেন, ট্রলারে রোগী পরিবহন করতে গিয়ে টাকা আর সময় দুটিই অপচয় হয়। দুর্ভোগের শিকার হতে হয় রোগী ও তাঁর স্বজনদের। নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি চালু থাকলে এমন কষ্ট করতে হতো না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খালিয়াজুরি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আতাউল গণি উসমানী ও নেত্রকোনা জেলা সিভিল সার্জন মো. তাজুল ইসলাম জানান, নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি চালানোর জন্য চালকের কোনো পদ সৃষ্টি করা হয়নি। এ কারণে কাউকে নিয়োগও দেওয়া যায়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।