প্রধানমন্ত্রীর নজরে এল মানবতার দৃষ্টান্ত, পাঠালেন উপহার

রাস্তা থেকে তুলে এনে বাক্‌ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী অন্তঃসত্ত্বা নারীকে (বারান্দায়) নিজ বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন দিনমজুর আমজাদ আলী ও তাঁর স্ত্রী সকিরন নেছা (ডানে)। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ময়ধরপুর গ্রামেপ্রথম আলো

ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ময়ধরপুর গ্রামের। গত ২২ সেপ্টেম্বর সকালে গ্রামের রাস্তার পাশে পড়ে ছিলেন এক অন্তঃসত্ত্বা বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারী (২৩)। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন দিনমজুর আমজাদ আলী (৪৮) ও সকিরন নেছা (৪২) দম্পতি। ওই নারীকে দেখে আমজাদ হোসেনের স্ত্রী সকিরন নেছা বুঝতে পারেন, যেকোনো মুহূর্তে তিনি সন্তান প্রসব করবেন। একজন নারী এভাবে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় রাস্তার ধারে পড়ে থাকবেন—এটা ভেবে তিনি ওই নারীকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। তাঁর থাকার ব্যবস্থা করেন। এরপর ২ অক্টোবর প্রতিবন্ধী ওই নারী কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।

খবরটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হতে সময় লাগেনি। সঙ্গে প্রচার পায় একাধিক গণমাধ্যমেও। আর এতেই তা নজরে পড়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রতিবন্ধী নারীটিকে এভাবে আশ্রয় দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন স্থাপন করায় এবার ওই দিনমজুর দম্পতিকে উপহার পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি জেলা প্রশাসককে (ডিসি) ওই প্রতিবন্ধী নারীটিকে সার্বিক সহযোগিতার নির্দেশ দেন।

ডিসির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জানতে পারেন, আমজাদ আগে ভ্যান চালাতেন। দারিদ্র্যের কারণে ভ্যানটি বিক্রি করে দিতে হয়েছে তাঁকে। ছেলে উপার্জন করতে না পারায় আমজাদ আলী ও তাঁর স্ত্রী দিনমজুরি করে সংসারটি চালাচ্ছেন।
রাস্তা থেকে তুলে এনে বাক্‌ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী অন্তঃসত্ত্বা নারীটির যত্ন নিচ্ছেন সকিরন নেছা। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ময়ধরপুর গ্রামে
প্রথম আলো

ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দিনমজুর পরিবারটির খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী। আমজাদ-সকিরন দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে-মেয়ে দুজনেরই বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে সালমান (২৬) সঙ্গেই থাকে তাঁদের। সালমান আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। দুর্ঘটনায় দুই পা ভেঙে এখন ঘরে পড়ে আছেন। ছেলের দুই মেয়ে। বড়টির বয়স চার বছর, নাম সোনিয়া এবং ছোটটির বয়স দুই বছর, নাম সাদিয়া। ছেলে, ছেলের বউ, দুই নাতনি নিয়ে আমজাদ-সকিরন দম্পতির এখনকার পরিবার।

ডিসির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জানতে পারেন, আমজাদ আগে ভ্যান চালাতেন। দারিদ্র্যের কারণে ভ্যানটি বিক্রি করে দিতে হয়েছে তাঁকে। ছেলে উপার্জন করতে না পারায় আমজাদ আলী ও তাঁর স্ত্রী দিনমজুরি করে সংসারটি চালাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ওই পরিবারকে এক লাখ টাকা উপহার হিসেবে দেন। সেখান থেকে কিছু টাকা দিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও বাকি ৫৫ হাজার টাকা আমজাদ-সকিরন দম্পতির হাতে তুলে দেন জেলা প্রশাসক। আজ বুধবার সকালে ওই দম্পতির হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার তুলে দেন ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভ্যানগাড়ি, নগদ টাকা আমজাদ আলী–সকিরন নেছা দম্পতির কাছে তুলে দিচ্ছেন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ
প্রথম আলো

এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবর্ণা রানী সাহা, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শিবলী নোমানীসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ আজ প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে তিনি ওই পরিবার ও প্রতিবন্ধী নারীর সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার হিসেবে তিনি নগদ টাকা ও একটি ভ্যান ওই দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁদের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে এসে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান। এ ছাড়া ওই প্রতিবন্ধী নারীকে সমাজসেবা দপ্তরের মাধ্যমে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে ও তাঁর নবজাতক সন্তানকে আমজাদ আলীর পরিবার দেখাশোনা করবে বলে জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভ্যান পেয়ে খুশি আমজাদ হোসেন
প্রথম আলো

প্রধানমন্ত্রী উপহার পেয়ে খুশি দিনমজুর আমজাদ আলী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আমজাদ আলী ও সকিরন নেছা রাত নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা কাজ করেছি, তার পুরস্কার পেলাম আজ। প্রতিবন্ধী মেয়েটাকে আমরা বাড়িতেই রাখব। তার বাচ্চাটিকেও আমরাই লালন-পালন করব। এখন থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকায় কেনা ভ্যান চালাব। তার আয় দিয়েই চলতে পারব। চিন্তা নেই।’

এদিকে প্রতিবন্ধী ওই নারী ও তাঁর কন্যাসন্তানের শারীরিক অবস্থা এখন ভালো বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসকেরা। মা-মেয়ে কালীগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।