প্রবহমান খালে বাঁধ দিয়ে দখলের অভিযোগ

‘পরান বল্লার’ নামের খালটিতে প্রভাবশালীরা মাছ চাষের উদ্যোগ নিয়েছে। রাস্তা বানানোর কথা বলে খাল ভরাট করা হচ্ছে।

খালে বাঁধ দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। গত বুধবার পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পরান বল্লার খালে
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের প্রবহমান খালে বাঁধ দিয়ে দখলের অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নের ‘পরান বল্লার’ নামের খালটিতে প্রভাবশালীরা মাছ চাষের উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁরা খালের মধ্য দিয়ে রাস্তা বানানোর কথা বলে ভরাটকাজ শুরু করেছেন।

খালের পানি দুই পারের কৃষকেরা সেচকাজ ও বাসিন্দারা ব্যবহার করেন। কিন্তু খাল দখল হয়ে গেলে পানিসংকটের আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় গ্রামবাসীর পক্ষে জহিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি অবিলম্বে বাঁধ তৈরির কাজ বন্ধ করে খালটি দখলমুক্ত করার জন্য ইউএনওর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়নের পরান বল্লার খালটি দৈর্ঘ্য প্রায় চার কিলোমিটার। এর গভীরতা প্রায় ২০ ফুট এবং প্রস্থ ১৫০ ফুট। খালটি রাবনাবাদ নদী থেকে ইউনিয়নের কালিরচর গ্রাম ও বড় গাবুয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গোলখালী নদীতে মিলেছে। রাবনাবাদ নদীর মুখে জলকপাট রয়েছে, যাতে খালের দুই পারের মানুষ দৈনন্দিন ও জমিতে সেচকাজে খালের পানি ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া এলাকার বেশ কিছু পরিবার খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে।

স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মোকছেদ হাওলাদার বলেন, খালের দুই পারের অন্তত দুই হাজার হেক্টর কৃষিজমি রয়েছে। সেখানে বোরো, আউশ, আমন, তরমুজ, মুগডাল প্রভৃতি খেতে খালের পানির ব্যবহার করা হয়। খালটিতে বাঁধ দেওয়া হলে চাষাবাদ ব্যাহত হবে।

গত বুধবার গিয়ে দেখা যায়, কালিরচর গ্রামের আনছার আলী নামের এক ব্যক্তির বাড়ির কাছে পরান বল্লার খালের মধ্যে বাঁশ ও জালের বেড়া। সেখানে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন-চার দিন আগ থেকে সেখানে বাঁধ দেওয়া শুরু হয়েছে।

জহিরুল ইসলাম নামের একজন অভিযোগ করেন, রাস্তা বানানোর কথা বলে কালিরচর গ্রামের আনছার ডাক্তারসহ কয়েকজন খালে বাঁধ দিচ্ছেন। পুকুর তৈরি করে মাছ চাষের জন্যই খালে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। খাল গভীর হওয়ার কারণে দুই পাড়ের বাসিন্দাদের কখনো মিষ্টি পানির সংকটে পড়তে হয়নি। এখন খালে বাঁধ দেওয়া হলে পানির জন্য ভোগান্তিতে বাড়বে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ৩ মে তিনি গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে আনছার আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘খালটি অনেক চওড়া। আমরা চেয়েছিলাম খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হোক। এ বিষয়ে উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু এত বড় সেতু নির্মাণে এই কার্যালয়ে বরাদ্দ নেই। তাই আমরা গ্রামের লোকজন মিলে নিজেদের টাকায় খালে বাঁধ দিয়ে একটু ছোট করে দিচ্ছি। মানুষের সুবিধার জন্য কাজ করছি।’

ইউএনও আশীষ কুমার বলেন, ‘খালে বাঁধ দেওয়াটা সম্পূর্ণ অবৈধ। অভিযোগ পেয়েছি। খালে বাঁধ দেওয়া বন্ধ করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’