প্রবাসীর স্ত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও, যুবলীগ নেতা কারাগারে

প্রতীকী ছবি

যশোরের অভয়নগরে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে (৩০) অস্ত্রের মুখে জোর করে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করার ঘটনায় গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা মো. ইমাদুল ওরফে ইবাদকে (৩৩) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ওই নারীকে গুলি করার ভয় দেখিয়ে ইমাদুল দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করে আসছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ওই যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই নারীকে অস্ত্রের মুখে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে একটি ঘরে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করেন। এরপর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাঁর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে নিয়মিত হতে বলেন। পরে ওই নারী ও তাঁর মায়ের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ গতকাল সোমবার ওই যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর বাড়ি থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, দুটি গুলি এবং ধারণ করা আপত্তিকর ভিডিওসহ মুঠোফোনটি জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার ইমাদুল উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি পদে রয়েছেন। তিনি শুভরাড়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের হামিদ শেখের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ও অস্ত্র আইনে মোট তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

গ্রেপ্তার ইমাদুল উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি পদে রয়েছেন। তিনি শুভরাড়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের হামিদ শেখের ছেলে।

প্রথম মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই নারীর বাবার বাড়ি উপজেলার একটি গ্রামে। ৬ জানুয়ারি সকালে বাবার বাড়ি থেকে ওই নারী তাঁর শিশুসন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে ফিরছিলেন। সকাল ১০টার দিকে তিনি উপজেলার নওয়াপাড়া বাজারের নূরবাগে একটি রেস্তোরাঁর সামনে এলে যুবলীগ নেতা ইমাদুল হক সেখানে উপস্থিত হন। তিনি এ সময় ওই নারীকে তাঁর সঙ্গে যেতে জবরদস্তি শুরু করেন, নইলে তাঁর সামনে তাঁর শিশুসন্তানকে খুন করার হুমকিসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন। একপর্যায়ে ইমাদুল তাঁকে নওয়াপাড়া রেলবস্তির একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। পরে তিনি নিয়মিত অনৈতিক সম্পর্ক না রাখলে ওই আপত্তিকর ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন।

ভুক্তভোগী নারীর মা বাদী হয়ে পৃথক একটি ধর্ষণের মামলা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, তাঁর মেয়ের জামাই দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। চার মাস আগে তিনি দেশে ফেরেন। তিনি প্রবাসে থাকাকালীন ইবাদুল ইসলাম তাঁর মেয়েকে গুলি করার ভয় দেখিয়ে অনেকবার ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর বিকেল তিনটার দিকে বাড়িতে ঢুকে তাঁর মেয়েকে জোর করে ধর্ষণ করেন ইবাদুল। বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে বিচার চাওয়ার কথা বলায় ইবাদুল তাঁর মেয়ের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এরপর গত বুধবার (৬ জানুয়ারি) সকালে তাঁর মেয়ে উপজেলার নওয়াপাড়া বাজারে গেলে সে সময় ইবাদুল মেয়ের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন।

প্রবাসীর স্ত্রীকে জোর করে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় মো. ইমাদুল ওরফে ইবাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে দুটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে।
তাজুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), অভয়নগর থানা

পুলিশ অভিযোগ পেয়ে গতকাল সকালে ইমাদুলকে আটক করে। এ সময় ওই আপত্তিকর ভিডিও এবং ভিডিও ধারণ করা মুঠোফোনটি জব্দ করে। পরে গতকাল রাতে দুটি ধারায় মামলার পর ইমাদুলকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পাশাপাশি ওই রাতেই গোপীনাথপুর ইমাদুলের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় তাঁর ঘরের ড্রেসিং টেবিলের নিচ থেকে একটি ওয়ান শুটার গান এবং দুটি গুলি উদ্ধার করা হয়।

অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, প্রবাসীর স্ত্রীকে জোর করে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় মো. ইমাদুল ওরফে ইবাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে দুটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। ইমাদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে অভয়নগর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক তালিম হোসেন বলেন, বিষয়টি তাঁরা জেনেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে মো. ইমাদুলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন