প্রভাব খাটিয়ে সাড়ে আট কোটি টাকার কাজ পেলেন আওয়ামী লীগ নেতা

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাড়ে ৮ কোটি টাকার কাজ প্রভাব বিস্তার ও সমঝোতার মাধ্যমে পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিডিউল বিক্রি হয়েছে ১২টি। দাখিল হয়েছে মাত্র তিনটি। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা।

বগুড়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচ) সাড়ে ৮ কোটি টাকার কাজ প্রভাব বিস্তার ও সমঝোতার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে এই কাজ পেয়েছেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান।

সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগ, ই-টেন্ডারের বদলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান এবং ক্ষমতাসীনদের প্রভাব বিস্তার করে কাজ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। শিডিউল বিক্রি হয়েছে ১২টি। দাখিল হয়েছে মাত্র তিনটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এই দরপত্র দাখিলের নির্ধারিত দিন ছিল। দরপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি–সমর্থিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৫০-২০০ নেতা–কর্মীর দখলে ছিল  জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) অর্থায়নে দেশের ২৩টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প  চলমান। এই প্রকল্প আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে শেরপুর পৌরসভায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পে সাড়ে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের এই অর্থ দিয়ে শেরপুর পৌর শহরে ৫টি গণশৌচাগার এবং ১০টি কমিউনিটি টয়লেট নির্মাণ ছাড়াও ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার নালা নির্মাণের জন্য সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করা হয়।

ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আহ্বান করা এই দরপত্রের শিডিউল বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ছাড়াও একাধিক স্থান থেকে সংগ্রহের সুযোগ থাকলেও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির আস্থাভাজন নেতা–কর্মীরা প্রভাব খাটিয়ে দরপত্র কিনতে সাধারণ ঠিকাদারদের বাধা দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেন, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আহ্বান করা এই দরপত্রের শিডিউল বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ছাড়াও একাধিক স্থান থেকে সংগ্রহের সুযোগ থাকলেও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির আস্থাভাজন নেতা–কর্মীরা প্রভাব খাটিয়ে দরপত্র কিনতে সাধারণ ঠিকাদারদের বাধা দেন। এ কারণে অনেকেই দরপত্র কিনতেই সাহস পাননি। আবার মাত্র ১২ জন ঠিকাদার শিডিউল কিনলেও চাপে পড়ে অনেকেই শিডিউল ফেলতে সাহস পাননি। আবার দু-একজন শিডিউল ফেলার চেষ্টা করলেও আওয়ামী লীগের নেতার সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েন।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি এলাকার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের বাইরে আওয়ামী লীগের সহযোগী কয়েকটি কয়েক সংগঠনের ১৫০-২০০ নেতা–কর্মীর ভিড়। ভেতরে ৭-৮ জন পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, ‘আমি বাইরের জেলা থেকে দরপত্র ফেলতে বগুড়ায় আসেন, কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়াও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের মহড়া দেখে দরপত্র ফেলতে আর সাহস পাইনি। ই-জিপির বদলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে টেন্ডারবাজির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা থেকে আসা একজন ঠিকাদার কার্যালয়ের বাইরে মহড়া দেওয়া নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে পড়েন। তিনি একপর্যায়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২৩টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের পরিচালক ওয়াজেদ আলীকে ফোন করে অভিযোগ করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি শিডিউল ফেলতে পারেননি।

আমি বাইরের জেলা থেকে দরপত্র ফেলতে বগুড়ায় এসেছিলাম, কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়াও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের মহড়া দেখে দরপত্র ফেলতে আর সাহস পাইনি। ই-জিপির বদলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে টেন্ডারবাজির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার

মুঠোফোনে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাউকে দরপত্র দাখিলে বাধা কিংবা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা হয়নি। বিধি মেনেই দরপত্রে অংশ নিয়েছি। প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই কাজ পেয়েছি। বড় কাজের দরপত্রে কৌতূহলবশত অনেকেই সেখানে আসতেই পারেন। আওয়ামী লীগ কিংবা সহযোগী সংগঠনের কেউ কোনো ঠিকাদারকে বাধা দেননি।’

জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, দরপত্র ফেলতে কাউকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ কোনো ঠিকাদার করেননি। কম দরপত্র বিক্রি এবং তিনটি দরপত্র দাখিল হওয়ার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, অন্যরা কেন দরপত্র ফেলেননি, তা সঠিক জানা নেই। অভিজ্ঞতার শর্তে কাজ না পাওয়ার শঙ্কা থেকেই হয়তো কেউ কেউ দরপত্র দাখিল করেননি।

মুঠোফোনে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ওয়াজেদ আলী বলেন, একজন ঠিকাদার  মুঠোফোনে দরপত্র ফেলতে বাধা দেওয়ার মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। ওই ঠিকাদার শিডিউল ফেলতে পারেননি, এমনটা তিনি জানাননি। ই-জিপির বদলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এই প্রকল্পের অর্থদাতা আইডিবি। তাদের গাইডলাইন অনুসরণ করেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।