প্রশাসনও চায় নয়টা ইউনিয়নে নৌকা হোক: বরগুনায় আ.লীগ নেতা

বক্তব্য দিচ্ছেন বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। আজ মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

বরগুনা সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রশাসন ‘নৌকার জয় চায়’ বলে মন্তব্য করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে মাথা ন্যাড়া করে চুনকালি দেওয়া ও হাত ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন এই নেতা।

বরগুনা সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আজ এই বিশেষ সভা করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা পাশাপাশি নয়টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সিদ্দিকুর রহমান সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। সভায় আওয়ামী লীগ নেতার এমন বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি হয়।

বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য যা কিছু দরকার, সবকিছুর জন্য আমরা প্রস্তুত।’

সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ওয়ালি উল্লাহকে বলতে শোনা যায়, ‘এই মুহূর্তে একটাই মূল্য, শেখ হাসিনার সম্মান। শেখ হাসিনার নৌকার দিকে যারা ষড়যন্ত্রের হাত বাড়াবে, তাদের হাত ভেঙে দেওয়া হবে। আজ আমরা এখানে যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছি, সেই সিদ্ধান্তগুলো যদি সভাপতি অনুমোদন করেন, তাহলেই সমাধান আসবে।’

সভাপতির বক্তব্যে মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দল কখনোই হারে না। হারে শুধু আমাদের কোন্দলের কারণে। শেখ হাসিনা যে কাজ করতেছেন, আমরা যারা নেতৃত্ব দিই, আমরা যে কাজ করছি, গ্রামগঞ্জে দলটাকে এমনভাবে পাকায়, এখন বলতেছে—এই নৌকা সেই নৌকা না। এ দল সে দল না। এ কথা ভুল। কিন্তু এই নৌকাই শেখ হাসিনার নৌকা। এই নৌকায় যারা নির্বাচন করতে না পারবে, আমাদের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তাদের মাথা চুনকালি দিয়ে কামাইয়া (ন্যাড়া) দিতে হবে।’ ২৬ মার্চের পর ‘বিদ্রোহীদের’ বহিষ্কার করার ঘোষণা দিয়ে এই নেতা বলেন, ‘যারা নৌকার বিদ্রোহ করবে, যাঁরা ষড়যন্ত্র করবে, তাঁদের কালো হাত ভেঙে দেওয়া হবে, যে যত বড় শক্তিই হোক না কেন। আপনারা সজাগ থাকবেন।’

কোনো সমস্যা হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করার আহ্বান জানিয়ে সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসনের কথা বলছেন না, আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরদা (জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) এবং শম্ভুদার (জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের সাংসদ) সঙ্গে কথা বলে প্রশাসনকে আমরা ঠিক করব। যে ইউনিয়নে সমস্যা আছে বলবেন আমরা মিটিং করব। প্রশাসনও চায় নয়টা ইউনিয়নে নৌকা হোক। কিন্তু সেইটা একটা প্রক্রিয়ায়, সেইটা মাথা খারাপ করে নয়।’

পরে জানতে চাইলে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘কারও হাত ভেঙে দেওয়া হবে এমন কোনো কথা এবং প্রশাসন চায় ৯ ইউনিয়নের নৌকা আসুক, এ রকম কোনো কথা আমি বলিনি। আমরা চাচ্ছি সবাই মিলে নৌকার নির্বাচন করব। এই এ রকম বক্তব্যই আমি দিয়েছি।’

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ওয়ালি উল্লাহ বলেন, ‘মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হবে, আমি এ ধরনের কোনো বক্তব্য দিইনি; আমি বলেছি, যারা শেখ হাসিনার নৌকায় ষড়যন্ত্র করবে, বেইমানি করবে, তাদের হাতকে ভেঙে দেওয়া হবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগ বিশেষ সভায় কী বলেছে, তা আমার জানা নেই।’