প্রশাসন–জনপ্রতিনিধি বিরোধ, টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কা

৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। ওই অর্থ বিতরণ নিয়ে ১৯ মে সভা হয়। তালিকা তৈরি নিয়ে সভায় মতানৈক্য হয়

শেরপুর জেলার মানচিত্র

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী বাছাই নিয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়েছে। এই কারণে প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের ৭০ লাখ টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব মতিউর রহমান বলেন, কমিটির সিদ্ধান্তে জনপ্রতিনিধিরা একমত হতে পারেননি। ফলে প্রণোদনা স্থগিত রয়েছে। এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে ‘দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে। প্রকল্পের মেয়াদ পাঁচ বছর। প্রকল্পের অধীনে গরু, লেয়ার, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি এবং হাঁসের খামারিদের সর্বনিম্ন সাড়ে ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়ার কথা। প্রথম ধাপে ১ হাজার ৭৩০ জনের মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়।

প্রথম ধাপের প্রণোদনা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ ছিল দুটি—খামারি না হয়েও অনেকে প্রণোদনা পেয়েছেন এবং অনেকের খামারের পরিসর ছোট হলেও বড় দেখিয়ে বেশি পরিমাণে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘প্রথম ধাপে নাকি পৌর শহরের ২০৮ জন প্রণোদনা পেয়েছেন। কিন্তু আমি তার কিছুই জানি না। প্রণোদনা বিতরণে অনিয়ম নিয়ে অনেকই আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। স্বচ্ছতার জন্য এবার আমরা জনপ্রতিনিধিরা সুবিধাভোগীদের প্রাথমিক তালিকা করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তারা তা মানতে চাইছেন না।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে প্রণোদনার জন্য আরও ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। ওই টাকা খামারিদের মধ্যে বিতরণের বিষয়ে গত ১৯ মে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভা হয়। সভায় জনপ্রতিনিধিরা প্রথম ধাপে প্রণোদনা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের প্রসঙ্গটি তোলেন। এরপর স্বচ্ছতার স্বার্থে তাঁরা নিজেরাই প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে দেবেন বলে দাবি তোলেন। বিষয়টি নিয়ে সভায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। এ অবস্থায় পৌর মেয়রের নেতৃত্বে ১২ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওই সভা বর্জন করেন। এতে বরাদ্দের ৭০ লাখ টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, গত ২৭ মের মধ্যে সুবিধাভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করার কথা ছিল। এখন যথাসময়ে প্রণোদনার অর্থ বিতরণ করতে না পারলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বরাদ্দের টাকা ফেরত চলে যাবে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রকল্প কমিটির সভাপতি হেলেনা পারভীন বলেন, কমিটির পক্ষে তিনি জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করতে একাধিকবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সমাধান না হওয়ায় প্রণোদনা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন ইউএনও।