প্রস্রাব করলেই মেডেল

যত্রতত্র প্রস্রাব না করার জন্য সচেতন করতে এক ব্যক্তির গলায় মেডেল পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিনব্রিজ এলাকা, সিলেট, ৩১ ডিসেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
যত্রতত্র প্রস্রাব না করার জন্য সচেতন করতে এক ব্যক্তির গলায় মেডেল পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিনব্রিজ এলাকা, সিলেট, ৩১ ডিসেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

সিলেটে কিনব্রিজের নিচের পূর্ব দিকের সড়ক ও ফুটপাতে প্রস্রাব করলেই মেডেল পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পথচারী ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে একদল তরুণ-তরুণী এই কর্মসূচি পালন করেন। নগরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে এমন কর্মসূচি তাঁরা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবেন।

আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে বেলা পাঁচটা পর্যন্ত সচেতনতামূলক এই কর্মসূচি পালন করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন সিলেটের সদস্যরা। তাঁরা বলেন, দিনভর কিনব্রিজ এলাকার রাস্তা ও ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে প্রস্রাব করতে আসা ১৮ জনকে সচেতন করতে পেরেছেন।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কেউ চুপিসারে সড়ক ও ফুটপাতে প্রস্রাব করলে অথবা প্রস্রাব করার প্রস্তুতি নিলে তাঁকে ঘিরে ধরছেন তরুণ-তরুণীরা। এরপর ব্যঙ্গ করে তাঁরা গলায় পরিয়ে দিয়েছেন মেডেল। তবে কেউ এই মেডেল নেননি।

‘যত্রতত্র করলে হিসু, সবাই তোমায় বলবে শিশু’—এই স্লোগান নিয়ে সংগঠনটি প্রথমবারের মতো এমন কর্মসূচি পালন করেছে। ২০ জন তরুণ-তরুণী এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে অংশ নেন।

সংগঠনটির উপদেষ্টা সামছি আরা আক্তার ফারমিছ বলেন, যত্রতত্র প্রস্রাব করা যেন চিরায়ত একটা নিয়ম হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল স্থান হওয়া সত্ত্বেও কিনব্রিজ এলাকায় অনেকেই প্রকাশ্যে প্রস্রাব করতে আসছেন। এতে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নগরের সৌন্দর্যও ব্যাহত হচ্ছে। যেসব কর্তৃপক্ষের এসব দেখার কথা, তারাও সেসব দেখছে না। তাই প্রস্রাব করতে আসা ব্যক্তিদের মেডেল দিয়ে সচেতনতা কর্মসূচি পালন করা হয়।

আবদুর রহিম নামের চল্লিশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ফুটপাতে প্রস্রাব করতে গেলে তরুণ-তরুণীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, উন্মুক্ত স্থানে প্রস্রাব করা অনুচিত কাজ, এটা ঠিক। কিন্তু এখানে তো বিকল্পও নেই। কোনো পাবলিক টয়লেট নেই। সিটি করপোরেশনের এই এলাকায় একটি গণশৌচাগার স্থাপন করা প্রয়োজন। পথচারীদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলে যত্রতত্র প্রস্রাব করা বন্ধ হবে।

একই রকম মন্তব্য করেন আরও অন্তত পাঁচজন পথচারী। তাঁরা জানিয়েছেন, গণশৌচাগার না থাকার কারণেই কিনব্রিজ এলাকার মতো নগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার যেখানে-সেখানে মানুষ প্রাকৃতিক কাজ সারছে।

যত্রতত্র প্রস্রাব না করার জন্য একজনকে সচেতন করছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। কিনব্রিজ এলাকা, সিলেট, ৩১ ডিসেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
যত্রতত্র প্রস্রাব না করার জন্য একজনকে সচেতন করছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। কিনব্রিজ এলাকা, সিলেট, ৩১ ডিসেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

সংগঠনটির সিলেটের সমন্বয়ক জাকারিয়া আহমেদ বলেন, সারা দেশেই তাঁদের সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। ২০১৬ সালের ৩ জুন কেন্দ্রীয়ভাবে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সিলেটে এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর। সিলেটে ১২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। শিক্ষার্থী, তরুণ উদ্যোক্তা থেকে নানা পেশার মানুষ এতে সম্পৃক্ত রয়েছেন। পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্যই তাঁদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

বিডি ক্লিন সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী যুবায়ের সাইফুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সচেতনতা কার্যক্রম চালানোর সময় আমরা চার ধরনের অফারের কথা প্রস্রাব করতে আসা ব্যক্তিদের জানিয়েছিলাম। কিন্তু সবাই এসব অফার গ্রহণ করতে অস্বীকার করে ভবিষ্যতে এমনটা করবেন না বলেও কথা দেন। আমরা মূলত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের ভেতর দিয়ে সামাজিক সচেতনতা চালাতে চেয়েছি। এ কর্মসূচির কারণে অনেকেই সচেতন হয়েছেন। কিন্তু যাঁদের বোঝার কথা, তাঁরাও যদি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় গণশৌচাগার তৈরি করে দেন, তাহলে নগরের পরিবেশ আরও সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন থাকবে।’