প্রার্থী বাছাইয়ের বিরোধে ‘লাঞ্ছিত’, আ.লীগ নেতার আত্মহত্যা

বাঞ্ছারামপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য বোরহান উদ্দিন
সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই নিয়ে হট্টগোলে লাঞ্ছনার শিকার হয়ে এক আওয়ামী লীগ নেতা আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার দুর্গারামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই নেতার নাম বোরহান উদ্দিন (৬০)। তিনি বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরের দুর্গারামপুর গ্রামের বাসিন্দা ও পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর বাঞ্ছারামপুর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই শেষ হয়েছে। এবার প্রার্থী বাছাই হয়েছে দলীয় কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে। আওয়ামী লীগ থেকে এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, প্রচার সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সহসভাপতি আমির হোসেন আনোয়ার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ভূঁইয়া ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল আহমেদ।

মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গতকাল সোমবার উপজেলা সদরের মাওলাগঞ্জ বাজারের এ বি তাজুল ইসলাম মিলনায়তনে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দলীয় কাউন্সিলররা ভোটের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী বাছাই করেন। প্রার্থী বাছাইয়ে মাত্র এক ভোট পাওয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় আমির হোসেনের কর্মী-সমর্থকেরা গ্রামের অন্যান্য ভোটার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মারধর ও লাঞ্ছিত করেন।

মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গতকাল সোমবার উপজেলা সদরের মাওলাগঞ্জ বাজারের এ বি তাজুল ইসলাম মিলনায়তনে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দলীয় কাউন্সিলররা ভোটের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী বাছাই করেন। কাউন্সিলে পৌর আওয়ামী লীগের কমিটির ৬৮ জন ভোটার ছাড়াও নয়টি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলিয়ে আরও ১৮ জন ভোটার ছিলেন। প্রার্থী নির্বাচনের এই কাউন্সিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ আবুল খায়ের। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

আমি এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বাবার লাশ দাফন করার পর বিষয়টি নিয়ে আমি সংবাদ সম্মেলন করব। তখন সব বলব।
জামাল উদ্দিন, বোরহান উদ্দিনের ছেলে

ফলাফলে দেখা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন সর্বোচ্চ ৩১ ভোট পেয়েছেন। এ ছাড়া প্রচার সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ পেয়েছেন ১৮ ভোট, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ১১ ভোট এবং সহসভাপতি আমির হোসেন পেয়েছেন মাত্র ১ ভোট। এ ছাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ভূঁইয়া ২৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন ও ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল আহমেদ শূন্য ভোট পেয়েছেন। সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ায় তোফাজ্জল হোসেনই ১০ ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে মাত্র এক ভোট পাওয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় আমির হোসেনের কর্মী-সমর্থকেরা গ্রামের অন্যান্য ভোটার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মারধর ও লাঞ্ছিত করেন। এ সময় দুর্গারামপুর গ্রামের বাসিন্দা পৌর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ইদ্রিস মিয়াসহ বেশ কয়েকজন মারধরের শিকার হন। পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য বোরহান উদ্দিন হন লাঞ্ছনার শিকার।

এ ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আমির হোসেনসহ ৫-৬ জন নেতা-কর্মী বোরহান উদ্দিনের বাসায় যান। গতকাল সন্ধ্যার ঘটনা আজ বিকেলে উপজেলার দুর্গারামপুর মাদ্রাসার মাঠে বসে তিনি সমাধান করবেন বলে বোরহানকে কথা দেন। কিন্তু নেতা-কর্মীরা যাওয়ার পরপরই বোরহান গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

তাঁকে (বোরহান) কোনো মারধর করা হয়নি। তাঁর বাড়িতে কেউ কোনো হামলা করেনি বা রাতেও কেউ যায়নি। মঙ্গলবার সকালে আমি এলাকার মুরব্বির নিয়ে বোরহান ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম। ভোট নিয়ে সোমবার রাতে যে মিছিল বা সভা হয়েছে, এসব আর হবে না বিষয়টি বোরহান ভাইকে জানিয়েছি।
আমির হোসেন আনোয়ার, পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহান উদ্দিনের ছেলে জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বাবার লাশ দাফন করার পর বিষয়টি নিয়ে আমি সংবাদ সম্মেলন করব। তখন সব বলব।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোরহান উদ্দিনের এক স্বজন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ভোটে দুর্গারামপুর গ্রামের ভোটাররা টাকা খেয়ে অন্যদের ভোট দিয়েছেন বলে এলাকায় মিছিল হয়। মিছিলে মারধর ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বোরহান লাঞ্ছনার শিকার হন। বোরহান সারা জীবন সততার সঙ্গে কাটিয়েছেন। আর তাই অপমান সইতে না পেরেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমির হোসেন আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁকে (বোরহান) কোনো মারধর করা হয়নি। তাঁর বাড়িতে কেউ কোনো হামলা করেনি বা রাতেও কেউ যায়নি। মঙ্গলবার সকালে আমি এলাকার মুরব্বির নিয়ে বোরহান ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম। ভোট নিয়ে সোমবার রাতে যে মিছিল বা সভা হয়েছে, এসব আর হবে না বিষয়টি বোরহান ভাইকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বোরহান ভাই অনেক ভালো ও সৎ মানুষ ছিলেন।’

এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি।’