ফলাফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত ফলাফলে বিজয়ী দুই প্রার্থীকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পরাজিত ঘোষণা করার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই নেতা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সোমবার রাজশাহী নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

দুই পরাজিত প্রার্থী হলেন গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হজরত আলী এবং রিশিকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুখলেসুর রহমান। দুজনেই স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

বেলা ১১টার দিকে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা মুখলেসুর সংবাদ সম্মেলন করেন। তখন কমিউনিটি সেন্টারে বিএনপি নেতা হজরত আলীও উপস্থিত ছিলেন। মুখলেসুরের সংবাদ সম্মেলনের পাঁচ মিনিট পর হজরত আলী একই চেয়ারে গিয়ে বসে নিজের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে মুখলেসুর ও হজরত আলী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সংবাদ সম্মেলনে মুখলেসুর রহমান বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত ফলাফলের কাগজ অনুযায়ী তিনি ৬৭৬ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর প্রতীক ছিল অটোরিকশা। তাঁর মোট প্রাপ্ত ভোট ৭ হাজার ২২। আর প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পান ৬ হাজার ৩৪৬ ভোট। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব করেন। একপর্যায়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সই করা ফলাফল পরিবর্তন করে তাঁকে পরাজিত ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল তিনি জেলা প্রশাসক ও জেলা নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি এই ফলাফল বাতিল করে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণার দাবি জানান।

একই কমিউনিটি সেন্টারে হজরত আলী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নির্বাচনে গোগ্রামে ইউনিয়ন থেকে তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মোট ১০টি কেন্দ্রে আনারস প্রতীকে ৯ হাজার ৮০১টি ভোট পড়ে।

হজরত আলী বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকে পড়েছে ৯ হাজার ২৮৭ ভোট। তিনি স্থানীয়ভাবে ঘোষিত ফলাফলে ৫১৪ ভোটে বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন। এই ফলাফলের কাগজে ১০টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে। তিনি তাঁর পোলিং এজেন্টদের মাধ্যমে রাত আটটার সময় এই ফলাফল হাতে পান। তিনি রাত সাড়ে আটটার সময় গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে ওই ফলাফল সরবরাহ করেন। নির্বাচন কর্মকর্তা তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন এবং তাঁকেই নির্বাচিত করা হবে বলে জানান। কিন্তু রাত দুইটার সময় তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা না করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মজিবর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, বেআইনিভাবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মজিবর রহমানের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এতে জনগণের ভোটের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটেনি। তিনি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলাফল বাতিলের দাবি জানান তিনি।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থীরা তাঁর কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। তিনি তাঁদের বুঝিয়ে বলেছেন যে জেলা প্রশাসকের কাজ হচ্ছে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখা। নির্বাচনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে জানাতে হবে অথবা নির্বাচন কমিশনে যেতে হবে।

এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ নিষ্পত্তি করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

যোগাযোগ করা হলে মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কাছে যে ফলাফলের কাগজ রয়েছে, তাতে তাঁর নৌকা প্রতীক বিজয়ী হয়েছে। আনারসের প্রার্থীর জয় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের দিন রাতে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দুজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ফলাফলের কাগজ যাচাই–বাছাই করেন। তাতে তাঁর নৌকা প্রতীকই বিজয়ী হয়েছে। আনারসের প্রার্থীর বিজয় দাবি করার কারণে আবার যাচাই–বাছাই করতে হয়েছে। এ জন্য ফলাফল ঘোষণা করতে বিলম্ব হয়েছিল। এখন অভিযোগ করতেই পারেন। আইনি প্রক্রিয়ায় সেটা মোকাবিলা করা হবে।

শহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। কারণ, এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। তারা তাঁকে যে ফলাফল দিয়েছে, সেটিই তিনি জানেন। তার বেশি তিনি কিছু বলতে পারবেন না।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা রাতেই আমাদের একটা ফলাফল শিট দেন। আবার প্রার্থীরাও একটা শিট আনেন। তখন দেখা যায়, দুজনের ফলাফল শিট এক নয়। তাই প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে রাতে আবার ডেকে এনে যাচাই করা হয়। এরপর ফল ঘোষণা করা হয়। ফল পাল্টানোর অভিযোগ সঠিক নয়।’