ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করেও মেলেনি বিল

পাউবো বলছে, বরাদ্দ স্বল্পতা ও চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ না আসায় যথাসময়ে বিল দেওয়া যাচ্ছে না।

ফসল রক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে এখন যানবাহন চলে
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের ৭টি উপজেলায় ৫৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ৬৩ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হয়েছে। আগের বাঁধগুলো সংস্কারের পাশাপাশি নতুন বাঁধ নির্মাণের কাজ পুরোটা শেষ হওয়ায় অনেকটা স্বস্তিতে হাওরের কৃষক। তবে পুরো কাজ শেষ করেও পাওনা টাকা পাননি পিআইসি সদস্যরা। এতে চরম বিপাকে আছেন তাঁরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, বরাদ্দ স্বল্পতা ও চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ না আসায় বিল দেওয়া যাচ্ছে না।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, ইটনা, ভৈরব, করিমগঞ্জ, তাড়াইল ও নিকলী উপজেলার হাওরে ৬৩ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার বাঁধের কাজের জন্য এবার বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৯ কোটি ৬১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। তবে বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ৩ কোটি ৮০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাঁধের কাজ শুরু করে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা শেষ করার কথা ছিল। পিআইসি গঠনের কাজ শেষ হয় ২১ জানুয়ারি। তবে এবার পানি দেরিতে নামায় ও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ১৫ মার্চ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।

পিআইসি সদস্যরা বলেছেন, পুরোদমে হাত লাগিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শতভাগ কাজ তাঁরা শেষ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, প্রকল্প কাজগুলোর বিপরীতে মোট বরাদ্দের শতকরা ৭৫ শতাংশ টাকা তাঁদের পাওয়ার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ টাকা।

গত বুধবার ইটনা উপজেলার বাদলা, রায়টুটি ও বড়িবাড়ি হাওরে সরেজমিনে বাঁধ পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক। এ সময় ৫ নম্বর পিআইসির সভাপতি মো. গনি ভূঞা বলেন, ইটনার নাডুরি খালের ওপর নির্মিত তাঁদের প্রকল্পটির বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ১৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত দুটি কিস্তিতে তাঁরা পেয়েছেন মাত্র ৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। নিয়ম অনুযায়ী, তৃতীয় কিস্তিসহ মোট বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও বাকি টাকা পাননি। তিনি বলেন, ‘ধারদেনা করে আমরা প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ করেছি। কিন্তু টাকা না পেয়ে এখন আমরা পড়েছি বিপাকে।’

ইটনার শান্তিপুর এলাকার কৃষক রুস্তম আলী, আঞ্জু মিয়া ও আবদুস সালাম বলেন, ২০১৭ সালে আগাম বন্যার কারণে তাঁরাও এক ছটাক ধান ঘরে তুলতে পারেননি। সেই থেকে ঋণের ঘানি টানছেন এই হাওরের কৃষকেরা। তবে এ বছর নাডুরি খালের ওপর মজবুত বাঁধ নির্মিত হয়েছে। ফলে এলাকার কৃষকেরা স্বস্তি অনুভব করছেন। এবার তাঁরা সোনালি ফসল ঘরে তুলে আগের ক্ষতিও অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করছেন।

কিশোরগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, বাঁধের কাজের অগ্রগতি ও মান যাচাইয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করেছে। তবে অর্থ বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে পিআইসি সদস্যদের এখনই টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। যেখানে ৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে, সেখানে বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বরাদ্দের বাকি ৫ কোটি ৮১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। টাকা হাতে পেলে সব পাওনা পরিশোধ করা হবে।