ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের তোড়জোড়

নির্মাণাধীন ভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যেই একটি হাসপাতাল, তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দুটি মসজিদ।

ফসলি জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা। সম্প্রতি মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে একটি ইটভাটা স্থাপনের তোড়জোড় চলছে। যদিও এর এক কিলোমিটারের মধ্যেই একটি হাসপাতাল, তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুটি মসজিদ, একটি গির্জা, একটি বাজারের অবস্থান। এ ছাড়া চারপাশে ফসলি জমি, জনবসতিও রয়েছে।

এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইটভাটা নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন এলাকাবাসী। গত ৩১ আগস্ট এলাকার বাসিন্দাদের স্বাক্ষরসংবলিত অভিযোগটি জমা দেওয়া হয়।

সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার কেদারগঞ্জ–দর্শনা সড়কের রতনপুর মাঠে পাকা সড়ক লাগোয়া ফসলি জমিতে এই ভাটার নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে ছোট ছোট ঘরও নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে মাটি বহনের কাজের জন্য একটি ট্রাক্টর দাঁড়িয়ে ছিল। ছোট একটি টিনশেডের ঘরও বানানো হয়েছে। সে ঘরে ইটভাটার নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপক রুহুল কুদ্দুস হিসাবপত্রের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। যেখানে ভাটাটি নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে সড়কের পাশে অর্ধশত বছরের রেইনট্রিগাছ ছায়া দিয়ে চলেছে। আশপাশের জমিতে এখনো আমন ধান রয়েছে। দক্ষিণ পাশে ১০ বিঘার একটি আমবাগান রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কোনো ব্যক্তি ভাটা নির্মাণ করতে চাইলে তাঁকে প্রথমে অবস্থানগত ছাড়পত্র ও পরে পরিবেশগত ছাড়পত্র নিতে হয়। অবস্থানগত ছাড়পত্র পাওয়ার আগে ওই জমিতে কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করার সুযোগ নেই।

এলাকার বাসিন্দারা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ভাটার জন্য নির্ধারিত জমিটি তিন ফসলি। এর এক কিলোমিটারের মধ্যে রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ডোলমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। ভাটাটি প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে ভাটা হলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে এবং শতাধিক পরিবার দারুণ সংকটে পড়বে।

কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, তিন ফসলি জমিতে ভাটা নির্মাণের জন্য অবস্থানগত ছাড়পত্র দেওয়ার বিধান নেই। এ রকম ঘটনা যদি এসব অঞ্চলে হয়ে থাকে, তবে নির্মাণকাজ তাৎক্ষণিক বন্ধ করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাটা নির্মাণের জন্য চান্দ আলী নামের স্থানীয় এক মাটি ও বালু ব্যবসায়ী ওই জমি ইজারা নিয়েছেন। জমির প্রকৃত মালিক রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবু শেখ জানান, জমিটি তাঁরা ইজারা নিয়েছেন মাটি ও বালুর ব্যবসা করবে বলে। এখন শুনছেন ইটভাটা করবে।

চান্দ আলী জানান, আইনি সব প্রক্রিয়া মেনেই তিনি নতুন ইটভাটা করার চেষ্টা করছেন। লাইসেন্স নেওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন।