ফসলের মাঠ যেন এক টুকরা ‘বাংলাদেশ’

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে জাতির জনকের প্রতি ভালবাসা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সবজি খেতে। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পাড়া খালবালা গ্রামে আজ সোমবার দুপুরেপ্রথম আলো

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পাড়া খালবালা গ্রামের কাঁচা রাস্তা দিয়ে যেতেই পাশের খেতে চোখে পড়ছে একটি শিল্পকর্ম। সেটি যে কারোর দৃষ্টি টেনে নিয়ে যাবে। খেতে লালশাক ও শর্ষের গাছ দিয়ে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় প্রতীক শাপলা, স্মৃতিসৌধ ও পানিতে ভাসমান নৌকা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সঙ্গে শাকগাছ দিয়ে লেখা হয়েছে ‘মুজিব ১০০ বর্ষ’।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতি ভালোবাসা থেকে এই নান্দনিক শিল্পকর্মটি সৃষ্টি করেছেন গ্রামের কৃষক আবদুল কাদির। পেছনে ছিল গ্রামের একদল তরুণের উদ্যোগ ও সহায়তা।

মুজিব বর্ষ হিসেবে এ বছর দেশজুড়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা ছিল। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির কারণে সেসব পরিকল্পনা সফল হয়নি। কিন্তু প্রিয় এই নেতার নামে যে বছরের নামকরণ হয়েছে, সে বছরে কিছু একটা করার কথা ভাবতে থাকে গ্রামের তরুণদের প্রতিষ্ঠিত ‘বন্ধুমহল পাড়া খালবালা ডিজিটাল ক্লাব’। সেখান থেকেই তাঁরা কৃষক আবদুল কাদিরের দ্বারস্থ হন। আবদুল কাদির এর আগে সবজির খেতে নানা শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তুলে আলোচনায় আসেন। ক্লাবের তরুণেরা আবদুল কাদিরের সঙ্গে মিলে বঙ্গবন্ধুর জন্য কিছু করার প্রস্তাব দেন। আবদুল কাদিরও সে প্রস্তাবে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে যান।

খেতে লালশাক ও শর্ষের গাছ দিয়ে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় প্রতীক শাপলা, স্মৃতিসৌধ ও পানিতে ভাসমান নৌকা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সঙ্গে শাকগাছ দিয়ে লেখা হয়েছে ‘মুজিব ১০০ বর্ষ’।
সবজি খেতে জাতির জনকের শিল্পকর্ম দেখতে জড়ো হয়েছে মানুষ। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পাড়া খালবালা গ্রামে আজ সোমবার দুপুরে
প্রথম আলো

মুজিব বর্ষের শিল্পকর্মটি তাঁরা বিজয় দিবসে দেশবাসীকে দেখাবেন বলে ঠিক করেন। সেই লক্ষ্যে আবদুল কাদিরের ৩০ শতক জমি বাছাই করা হয়। ওই জমিতে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ক্লাবের ১০০ জন তরুণ আবদুল কাদিরের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। খেতে চাষ দেওয়া, মই দেওয়া, বীজ বোনা থেকে শুরু করে নিড়ানি—সব হয়েছে ‘দশে মিলে করি কাজ’ নীতি মেনে। ওপর থেকে শিল্পকর্মটি ভালো করে অবলোকনের জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ারও।

বন্ধুমহল পাড়া খালবালা ডিজিটাল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল ইসলাম সোহেল গতকাল রোববার সবজিখেতের এ শিল্পকর্মের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেন। এরপর আজ সোমবার সকাল থেকে এ ছবি প্রচুর লোক তাঁদের ফেসবুকে শেয়ার করতে শুরু করেছেন। কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকও আজ সকালে এ ছবি তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

আঁকার ওপর লালশাক ও শর্ষের বীজ বপন করা হয় ১ ডিসেম্বর। ধারণা ছিল ১৬ ডিসেম্বর সেটি চমৎকার হয়ে ফুটে উঠবে। কিন্তু শীত আর কুয়াশার কারণে সেটি এখনো পূর্ণাঙ্গরূপে ফুটে ওঠেনি। আশা করছি আর এক সপ্তাহের মধ্যে দারুণভাবে ফুটে উঠবে এ শিল্পকর্ম।
আবদুল কাদির, শিল্পকর্মের কারিগর কৃষক

খালবালা বাজারের পাকা সড়ক থেকে নেমে কাঁচা রাস্তা ধরে পশ্চিম দিকে এক কিলোমিটার এগোলেই আবদুল কাদিরের সবজিখেত। সরেজমিনে আজ দুপুরে সেখানে দেখা যায়, আবদুল কাদিরের সবজিখেতে শত শত মানুষ ভিড় করেছেন। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তাঁরা জাতির জনককে নিয়ে আঁকা এ শিল্পকর্ম দেখতে এসেছেন। সবজিখেতের এক পাশে বাঁশের তৈরি ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে মানুষ এ শিল্পকর্ম দেখছেন। মানুষের ভিড়ের মধ্যে ছিলেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার ধর। তিনি বলেন, আবদুল কাদির আগেও সবজিখেতে শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে মুজিব বর্ষে জাতির জনককে সবজিখেতে ফুটিয়ে তুলে তিনি দেশপ্রেমের জানান দিয়েছেন।

আবদুল কাদির বলেন, তিনি বিভিন্ন সময় সবজির খেতে নানা ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করে থাকেন। এ বছর মুজিব বর্ষ। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর নিজের এবং গ্রামের তরুণদের ভালোবাসার কারণে এ বছর সবজির খেতে জাতির পিতার মুখ ফুটিয়ে তোলার পরিকল্পনা হয়। তিন সপ্তাহ আগে শুরু হয় পরিকল্পনা। তরুণেরা কম্পিউটারে প্রথমে জাতির পিতার মুখের একটা নকশা তৈরি করেন। পরে সেটি ফসলের খেতে আঁকা হয়। পরে সেই আঁকার ওপর লালশাক ও শর্ষের বীজ বপন করা হয় ১ ডিসেম্বর। তাঁদের ধারণা ছিল ১৬ ডিসেম্বর সেটি চমৎকার হয়ে ফুটে উঠবে। কিন্তু শীত আর কুয়াশার কারণে সেটি এখনো পূর্ণাঙ্গরূপে ফুটে ওঠেনি। তবে তাঁরা আশা করছেন, আর এক সপ্তাহের মধ্যে দারুণভাবে ফুটে উঠবে এ শিল্পকর্ম।

বন্ধুমহল পাড়া খালবালা ডিজিটাল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল ইসলাম বলেন, আবদুল কাদির পেশায় কৃষক। তিনি ক্লাবের উপদেষ্টাও। তিনি একজন সৃজনশীল মানুষ, বিভিন্ন সময় সবজির খেতে শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলেন। এ বছর তাঁর মাধ্যমে সবজিখেতে জাতির পিতার মুখ ও এক টুকরো বাংলাদেশকে ফুটিয়ে তুলেছেন ক্লাবের তরুণেরা। এটি মুজিব বর্ষের জাতির পিতার প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন।