‘ফিক্সেশন’ করতে চাঁদা আদায়

বিষয়টি তদন্ত করতে গত রোববার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণের (ফিক্সেশন) নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি তদন্ত করতে গত রোববার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে নেত্রকোনা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হাসান মো. রেজাউল করিমকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন মদন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তারিক সালাউদ্দিন ও মো.শাহিন মিয়া।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওবায়দুল্লাহ গতকাল সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ১৩তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের কথা বলে কলমাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনের নেতৃত্বে সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। তাই বিষয়টি তদন্ত করতে তিন সদস্যের ওই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ২৫ মের এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস, হিসাবরক্ষণ অফিস ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলমাকান্দায় ১৭২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সাত শতাধিক সহকারী শিক্ষক কর্মরত। শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গত বছর তাঁদের বেতন কাঠামো ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করে। সম্প্রতি এ বিষয়ে অনলাইনে আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু কলমাকান্দায় শিক্ষক নেতা ও সচিত্রবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল হোসেনের নেতৃত্বে শিক্ষকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তাঁরা প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত ২০ সহকারী শিক্ষক বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে বাবুল হোসেনের নেতৃত্বে চার–পাঁচজন শিক্ষক নেতা ‘ফিক্সেশন’ করার জন্য হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের খরচের কথা বলে ওই টাকা তুলছেন। এই অবৈধ কাজের সঙ্গে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছেন। বাবুল হোসেনসহ কয়েক শিক্ষক কয়েক মাস আগেও অনৈতিকভাবে টাকা আদায় করেছেন। তখন স্থানীয় সাংসদ মানু মজুমদারকে সংবর্ধনার কথা বলে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা আদায় করা হয়।

তবে বাবুল হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ফিক্সেশনের কথা বলে কোনো টাকা আদায় করিনি। এটা আগে কয়েক শিক্ষক অ্যাকাউন্টস অফিসে যোগাযোগ করেছিলেন। সেখানে কিছু টাকা লাগতে পারে। এখন টাকা না দিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিষেধ করে দিয়েছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কমিটি নির্বাচিত হওয়ার পর এমপি সাহেবের সংবর্ধনায় শিক্ষকেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খরচ করেছেন। এ জন্য কোনো টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। আসলে কয়েক শিক্ষক ঈর্ষান্বিত হয়ে এমন অপবাদ রটাচ্ছেন।’

কলমাকান্দা উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মাসুম খান বলেন, ‘আমার অফিসের কেউ টাকা আদায়ের সঙ্গে জড়িত নন। বেশ কয়েক শিক্ষকনেতা কিছুদিন আগে আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁরা সহকারী শিক্ষকদের সর্বোচ্চ স্কেলে বেতন করে দিতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি বলেছিলাম, প্রায় ৮০০ শিক্ষকের বেতনের কাজ এ অল্প সময়ে করে দেওয়া সম্ভব নয়।’