ফেনীতে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে এবারও ধস

ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কের পাশে সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া বাজারে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চামড়ার আড়তে ও আড়তের সামনে লবণ দিয়ে চামড়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাত করছেন শ্রমিকেরা।
ছবি: প্রথম আলো

ফেনী পৌরসভার পশ্চিম উকিলপাড়ার বাসিন্দা মো. ফরহাদ কোরবানির গরুর চামড়া নিয়ে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীর অপেক্ষায় সারা দিন বাড়িতেই ছিলেন। সন্ধ্যায় তিনি শহরের ট্রাংক রোডের অস্থায়ী চামড়ার বাজারে নিয়ে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়াটি ২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।

পূর্ব বিজয়সিংহ গ্রামের হারিছ আহম্মদ তাঁর ৬৪ হাজার টাকার গরুর চামড়া ১০০ টাকায় বিক্রি করেন। পরশুরামের এম এ হাসান ৫৪ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি করেন ১০০ টাকায়, দাগনভূঁঞার রামানন্দপুর গ্রামের শওকত হোসেন ১ লাখ ৩ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়া বিক্রি করেন ১৫০ টাকায়।

খুশীপুর গ্রামের মনির আহম্মদ বলেন, তাঁদের ১ লাখ ২১ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়া ১৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন।

ফেনী সদর উপজেলার দমদমা হাফেজিয়া মাদ্রাসার সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, তাঁরা ১০০ চামড়া গড়ে ২০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন।

ফেনী শহরের শান্তি কোম্পানী রোডের ইসলামিয়া এতিমখানার সভাপতি কে বি এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এলাকাবাসীর দেওয়া ২৩২টি গরুর চামড়া গড়ে ২৫০ টাকা করে শহরের ট্রাংক রোডের অস্থায়ী বাজারে বিক্রি করেছেন।

সোনাগাজীর বাদুরিয়া গ্রামের আবুল বাসার বলেন, ‘অন্যান্য বছর কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য গ্রামে একাধিক মৌসুমি ক্রেতা চামড়া কিনতে আসত। বাড়িতেই দরদাম করে তারা চামড়া কিনে নিয়ে যেত। এ বছর সারা দিনেও চামড়া কেনার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। তাই তাঁরা স্থানীয় মাদ্রাসায় দিয়ে দিয়েছেন।’

ফেনীর গ্রামে গ্রামে এ বছরও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের তেমন দেখাই মেলেনি। ফলে ফেনীতে এ বছরও কোরবানির পশুর চামড়ার দামে ধস নেমেছে। এলাকাভেদে বিভিন্ন গ্রামে গরু ও মহিষের ছোট–বড় সব ধরনের চামড়া ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এলাকায় কোনো মৌসুমি ব্যবসায়ীর দেখা না পেয়ে ৯৫ শতাংশ কোরবানি চামড়া স্থানীয় মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বুধবার সন্ধ্যায় ফেনী সদর উপজেলার চাড়িপুর এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী নুর উদ্দিন জানান, তিনি গড়ে ২৫০ টাকা ধরে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ৫টি চামড়া কিনে রিকশা ভাড়া দিয়ে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে নিয়ে লোকসানে ২২০ টাকা ধরে বিক্রি করতে হয়েছে। মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে।

ফেনীর সবচেয়ে বড় আড়তদারের ব্যবসাকেন্দ্র পাঁচগাছিয়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ঢাকায় ট্যানারিতে বা বড় আড়তে চামড়া বিক্রি করে বকেয়া টাকা ৫ বছরেও আদায় করা যায় না।

জেলার পাঁচগাছিয়া বাজারে অবস্থিত সবচেয়ে বড় আড়তদার নিজাম উদ্দিন দাবি করেন, তিনি এ বছর গড়ে ২৫০-৩৫০ টাকায় চামড়া কিনেছেন।

আড়তদার হেলাল উদ্দিন জানান, তিনি গড়ে ৩০০-৩৫০ টাকা দরে চামড়া কিনেছেন। তিনি বলেন, ঢাকায় ট্যানারির মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করে বছরের পর বছর বকেয়া টাকার জন্য তাঁদের পিছে পিছে ঘুরতে হয়, সহজে টাকা পাওয়া যায় না।

পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, জেলায় একমাত্র তাঁর ইউনিয়নের পাঁচগাছিয়া বাজারে একসময়ে চামড়ার ছোট বড় ৪০-৪৫ জন আড়তদার ছিলেন। গত কয়েক বছরে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।

বর্তমানে ১৫-১৬ জন আড়তদার টিকে রয়েছেন। চলতি বছর ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকায় তাঁরা চামড়া কিনছেন। বিভিন্ন উপজেলায়ও কিছু আড়তদার চামড়া কিনেছেন বলে তিনি শুনেছেন।