ফের কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ

নাব্যতা সংকটে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকেরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে
প্রথম আলো

নাব্যতা সংকটে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে। বৃহস্পতিবার সকালে নৌ-চ্যানেল মুখে সৃষ্ট ডুবোচরে চলাচলরত ফেরিগুলো আটকে যাওয়ায় বেলা ১১টার পর থেকে চলাচল স্থগিত রাখে ঘাট কর্তৃপক্ষ। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে চার দফায় অন্তত ১৫ দিন বন্ধ ছিল ফেরি চলাচল।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট সূত্র জানায়, এই নৌপথে বর্তমানে ১৪টি ফেরি সচল আছে। বৃহস্পতিবার ভোরে উভয় ঘাট থেকে ৬টি করে ফেরি চলাচল শুরু করে। এর মধ্যে তিনটি ছোট ও তিনটি মাঝারি কে-টাইপ ফেরি। সকাল ৭টার দিকে কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে কে-টাইপ ফেরি কুমিল্লা স্বল্পসংখ্যক যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে যাচ্ছিল। ফেরিটি পদ্মা সেতুর কাছাকাছি চায়না নৌ-চ্যানেলে প্রবেশ করলে ডুবোচরে আটকে যায়। পরে দীর্ঘ সময় চেষ্টা চালিয়ে ডুবোচরে আটকে পড়া ফেরিটি শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছায়। বেলা ১১টার পর থেকে বিআইডব্লিউটিএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘাট কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখে।

এদিকে হঠাৎ ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকেরা। উভয় ঘাটেই আটকা পড়েছে কয়েকশ যানবাহন। শিমুলিয়া থেকে বরিশালগামী প্রাইভেটকারের যাত্রী কাইয়ুম ব্যাপারী বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে ঘাটে ফেরি পারাপারের জন্য বসে আছি। ১২টার পর শুনি, ফেরি নাকি আর চলবে না। এখন গাড়ি নিয়ে কীভাবে পদ্মা পাড়ি দেব? ঘাটের লোকদের কাছে জানতে চাইলাম, তাঁরা পাটুরিয়া হয়ে যেতে বললেন। কিন্তু পাটুরিয়া হয়ে যাওয়ার পথ অনেক দীর্ঘ। এত দুর্ভোগ নিয়ে ঘাটে বসে থেকে আবার উল্টো পথে গেলে আমাদের কষ্টের আর কিছু বাকি থাকে না।’

নাব্যতা সংকটে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। এতে জমেছে ট্রাকের সারি
প্রথম আলো

কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় আটকে থাকা পণ্যবাহী ট্রাকের চালক দিদারুল আলম বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে ফেরিতে একটা বা দুইটা ট্রাক লোড নেয়। ছোট গাড়িতে ভরা থাকে ফেরি। ট্রাক ফেরিতে কম তোলায় আমরা ঘাটে আটকা ছিলাম। এখন আবার পুরোপুরি বন্ধ ফেরি চলাচল। কবে পদ্মা পাড়ি দিতে পারব, তা কেউ বলতে পারছেন না।’
সিলেটগামী আরেক ট্রাকের চালক সাজিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাটের টার্মিনালে দিনের পর দিন পড়ে থাকলে আমাদের কোনো আয় তো নেই-ই, বরং শুধু ব্যয়। ফেরি সার্ভিস ঠিক না হলে আমাদের দুর্ভোগ আর কমবে না।’

জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌপথের বিভিন্ন স্থানে নাব্যতা-সংকট থাকায় আমরা ঠিকমতো ফেরি চালাতে পারছিলাম না। গত মাসে আমরা চার দফায় ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছি। দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমরা খুব কষ্টে ৫-৬টি ছোট ও মাঝারি ফেরি চলাচল সচল রেখেছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে নৌ-চ্যানেলের মুখে পানি কমে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ডুবোচরে প্রায় প্রতিটি ফেরি আটকে যাচ্ছিল। নদীর এই নাব্যতা সংকট না কমলে আমরা ফেরি চালাতে পারব না। আমরা বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নাব্যতা সংকট নিরসনে একাধিক খননযন্ত্র বসিয়ে কাজ করছে। তবে কখন থেকে ফেরি চালাতে পারব, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।’

নাব্যতা সংকটে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। বৃহস্পতিবার বিকেলে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে
প্রথম আলো

কাঁঠালবাড়ি ফেরি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেরি বন্ধ হওয়ার আগে যানবাহনের ভালো চাপ ছিল। টার্মিনাল ও সংযোগ সড়কের লাইনে ছিল ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন। ফেরি চলাচল স্থগিত রাখার পর আমরা মাইকিং করে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের বিকল্প নৌপথ হিসেবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ব্যবহার করতে অনুরোধ জানিয়েছি। এর পর থেকে যানবাহনের চাপ কমছে। তবে এখনো অর্ধশত পণ্যবাহী ট্রাক টার্মিনালে পারাপারের অপেক্ষায় আছে।’