ফেরি–স্বল্পতায় দুই ঘাটে গাড়ির দীর্ঘ লাইন

ফেরি–স্বল্পতার কারণে দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া নৌপথে পার হতে পারছে না শত শত গাড়ি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষাতেও কাজ হচ্ছে না। আজ শনিবার বিকেলে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট মোড়ে গাড়ির দীর্ঘ লাইন
প্রথম আলো

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি–স্বল্পতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। পর্যাপ্ত ফেরির অভাবে ২ ঘাটে প্রায় ৬০০ যানবাহন আটকা পড়েছে। আরও যান এসে ভিড়ছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থেকেও যানগুলো নদী পার হতে পারছে না। পাশাপাশি শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় ওই রুটের গাড়িগুলো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুট দিয়ে পারাপার হতে দুই ঘাটে ভিড় করায় বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়েছে। এই মুহূর্তে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি না বাড়ালে ঘাটে অপেক্ষারত যানবাহনের কয়েক দিন লাগবে নদী পার হতে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ঈদে ১৩টি বড়, ২টি মাঝারি ও ৫টি ছোট ফেরি চালু রাখা হয়। এর আগে-পরে কিছু ফেরি কম থাকলেও ঈদে গাড়ি ও যাত্রীর বাড়তি চাপ সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ ২০টি ফেরি চালু রাখে। ঈদের পর বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, মতিউর রহমান ও রুহুল আমিন নামের বড় তিনটি ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি হওয়ায় সংস্কার করতে সেগুলো নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। বনলতা নামের আরেকটি ছোট ফেরি এক মাসের বেশি সময় ধরে বিকল হয়ে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটসংলগ্ন ভাসমান কারখানা মধুমতিতে রয়েছে। বাকি ১৬টি ফেরি চালু থাকলেও মাঝেমধ্যে ১-২টি ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটিতে বসে থাকছে।

এ ছাড়া এই নৌপথে তীব্র স্রোত ও নাব্যতা–সংকটের কারণে ফেরি চলাচল নির্বিঘ্ন হচ্ছে না। পাটুরিয়ার কাছে অ্যাপ্রোচ চ্যানেলে পলি পড়ে ডুবোচর দেখা দেওয়ায় ফেরি ভিড়তে বেশ কিছুদিন সমস্যা হয়। চারটি খননযন্ত্র নিয়মিত চালু রাখায় নাব্যতা–সংকট অনেকটা কাটিয়ে ফেরি চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ বলেন, নাব্যতা–সংকট অনেকটা দূর হলেও এখন ফেরি–স্বল্পতার কারণেই মূলত গাড়ি পারাপার বিলম্বিত হচ্ছে। সঙ্গে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথেও ফেরি পারাপার ব্যাহত হওয়ায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে বাড়তি চাপ পড়ছে। এ ছাড়া ২ ও ৩ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বিআইডব্লিউটিএকে জানানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পাটুরিয়ার ১ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনের কবজা ভেঙে যাওয়ায় ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। ঘাটটি দ্রুত চালু করতে পন্টুন মেরামতের কাজ চলছে।

পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে দৌলতদিয়া ২ নম্বর ফেরিঘাট অ্যাপ্রোচ সড়কের অংশ ধসে পড়েছে। ভাঙন বাড়ার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে ২ ও ৩ নম্বর ফেরিঘাট। সোমবার দুপুরে তোলা ছবি
প্রথম আলো

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার বলেন, শনিবার সন্ধ্যার আগে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ফেরি আসার কথা রয়েছে। এক মাস ধরে একটি ফেরি পাটুরিয়ার কারখানায় আছে। ফেরি–স্বল্পতা ছাড়া দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হওয়ায় বাড়তি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত দুই ঘাটে ছয় শতাধিক গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দীন পাঠান বলেন, বিআইডব্লিউটিএ সব কটি ঘাট চালু রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট থেকে ৩ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫৫০ মিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি দিয়ে এবং মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।