ফেসবুকে প্রেম, বিয়ের চাপ দেওয়ায় গলা কেটে হত্যা: পুলিশ

সোনাইমুড়ীতে নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার শাহাদত হোসেন। রোববার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার পিতাম্বরপুর গ্রামে জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে পাখি (৩২) নামের এক নারীকে গলা ও হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ফেসবুকে ওই নারীর সঙ্গে একই এলাকার শাহাদত নামের এক তরুণের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের জেরে শাহাদতকে বিয়ের জন্য চাপ দেন ওই নারী। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও মনোমালিন্য হয়। যার জেরে শাহাদত ১৪ জুন রাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা ও হাত-পায়ের রগ কেটে ওই নারীকে হত্যা করেন।

আজ রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। পুলিশ সুপার বলেন, সোনাইমুড়ীতে নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধারের পর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের জন্য সোনাইমুড়ী থানা-পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার বিকেলে একই গ্রামের বাসিন্দা শাহাদত হোসেনকে আটক করা হয়।

আরও পড়ুন

পুলিশ সুপার বলেন, শাহাদতকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জান্নাতুলকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছেন। পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে শাহাদতের দাবি, গত ২৯ মে ওই নারীর সঙ্গে তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মেসেঞ্জারে পরিচয় হয়। তার পর থেকে তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয় এবং দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে তখন ওই নারী জানতেন না শাহাদত বিবাহিত। পরবর্তী সময়ে ওই নারীকে বিয়ের জন্য শাহাদতকে চাপ দেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও মনোমালিন্য হয়।

পুলিশ সুপার জানান, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শাহাদত জানিয়েছেন, ১৪ জুন রাত আটটার দিকে তিনি ওই নারীকে পিতাম্বরপুর গ্রামের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যান। সেখানে বিয়ে নিয়ে উভয়ের মধ্যে ব্যাপক কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শাহাদত তাঁর কাছে থাকা ছোরা বের করে জান্নাতুলের গলায় পোচ দেন। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন শাহাদত মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য জান্নাতুলের হাত ও পায়ের রগ কেটে দেন এবং রক্তমাখা ছোরা ও জান্নাতুলের মুঠোফোনটি পার্শ্ববর্তী একটি ডোবায় ফেলে দেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, শাহাদতের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ সকালে ওই ডোবা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা ও জান্নাতুলের মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। শাহাদতকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের শিকার জান্নাতুলের প্রথম বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। তিন বছর পর তাঁর বিচ্ছেদ ঘটে। প্রথম সংসারে জান্নাতুলের একটি মেয়ে আছে। এরপর ২০১৪ সালে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। সেই সংসারও ছয় মাসের ভেঙে যায়। এরপর জান্নাতুল মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন। এর মধ্যে শাহাদতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয় এবং শেষে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি।

পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা অন্য যেকোনো মাধ্যমে কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর আগে প্রত্যেকের সতর্ক হওয়া জরুরি।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বড় বোনের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন জান্নাতুল। রাত আটটার পর থেকে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। বুধবার সকালে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে একটি সবজিখেতে গলা ও হাত-পায়ের রগ কাটা অবস্থায় জান্নাতুলের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নিহত জান্নাতুলের ছোট ভাই কাউছার আহমেদ বাদী হয়ে সোনাইমুড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি।