ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদ, স্কুলছাত্রীকে ভারতে পাচারকালে উদ্ধার

দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ভারতে পাচারের চেষ্টাকালে যশোর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে
প্রতীকী ছবি

শরীয়তপুর সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রীকে (১৬) ভারতে পাচারের চেষ্টাকালে উদ্ধার করা হয়েছে। নারী ও শিশু পাচার রোধের কাজে নিয়োজিত একটি এনজিওর নারী কর্মীরা আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে যশোরের চাঁচড়া চেকপোস্ট থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে মহিলা অধিদপ্তরে নিয়ে যান। বর্তমানে ওই কিশোরী সংস্থাটির সেফহোমে রয়েছে।

পরে যশোর মহিলা অধিদপ্তর থেকে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জেলা প্রশাসন থেকে বিকেলে ওই কিশোরীর পরিবারকে খবর দিয়েছে।

ওই কিশোরী ও তার পরিবারের ভাষ্য থেকে জানা যায়, কিশোরীর বাবা ভ্যানচালক এবং মা প্রবাসে থাকেন। বাবার সঙ্গেই মেয়েটি বসবাস করত। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ে সে। ছয় মাস আগে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় থেকে প্রেম এবং একপর্যায়ে বিয়ে করে। তবে চার মাস সংসার করার পরই সে প্রতারিত হয়েছে অভিযোগে স্বামীকে ছেড়ে চলে আসে। এরপর এক মাস আগে ফেসবুকে যশোরের এম ডি শিহাব খান নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক হয়।

মেয়েটির ভাগ্য ভালো আমাদের নজরে পড়েছিল। তা না হলে ভারতে পাচার করা হতো। যে চক্র তাকে যশোর এনেছিল, তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।
সুনিতা সরকার, মাঠ তদন্ত কর্মকর্তা, অপারেশন জেনারেশন

গত রোববার ওই শিহাব খান কিশোরীকে বিয়ে করার কথা বলে যশোরে যেতে বলেন। গতকাল সোমবার দুপুরে ওই কিশোরী একটি মোটরসাইকেল ভাড়া করে রাত নয়টার দিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যশোর পৌঁছায়। সেখানে অপেক্ষারত ওই যুবক তাকে মনিহার এলাকার একটি হোটেলে নিয়ে যান। কিন্তু কিশোরী হোটেলে থাকতে অনীহা প্রকাশ করে। তখন তাকে শহরের একটি বস্তিতে এক নারীর কাছে রাখা হয়। রাতেই তার কাছে থাকা তিন হাজার টাকা ও মুঠোফোন কেড়ে নেন ওই যুবক।

এরপর সকালে ওই কিশোরীকে নেওয়া হয় চাঁচড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। ওই বাসস্ট্যান্ড থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বাস চলাচল করে। সম্প্রতি ভারতে নারী পাচারের বিভিন্ন ঘটনা দেশে আলোচিত হচ্ছে। এ কারণে প্রশাসন, নারী ও শিশু পাচার রোধে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) সীমান্ত এলাকায় যাতায়াতের রুট ও চেকপোস্টগুলোতে তৎপর রয়েছে। সকাল নয়টার দিকে কিশোরী ও তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা যুবককে সীমান্তের দিকের বাসের খোঁজে থাকার বিষয়টি নজরে আসে অপারেশন জেনারেশনের মাঠ কর্মকর্তা সুনিতা সরকারের। তিনি তখন ওই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেন। কিশোরী তাঁকে সব ঘটনা জানায়। ততক্ষণে ওই যুবক সেখান থেকে পালিয়ে যান। কিশোরীকে উদ্ধার করে সকাল ১০টায় নেওয়া হয় যশোর মহিলা অধিদপ্তর কার্যালয়ে।

সকালে কিশোরী ও তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা যুবককে সীমান্তের দিকের বাসের খোঁজে থাকার বিষয়টি নজরে আসে সুনিতা সরকারের। তিনি তখন ওই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেন। কিশোরী তাঁকে সব ঘটনা জানায়। ততক্ষণে ওই যুবক সেখান থেকে পালিয়ে যান।

মুঠোফোন ওই কিশোরী প্রথম আলোকে বলে, ‘এক মাস আগে থেকে এম ডি শিহাব খান নামের ফেসবুক আইডিধারী যুবকের সঙ্গে প্রতিদিন কথা হতো আমার। সে আমাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাই পালিয়ে যশোর আসি। আমি বুঝতে পারিনি আমাকে পাচারের জন্য ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদ পাতা হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি রক্ষা পেয়েছি।’

কিশোরীর বাবা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছি, ছোট মেয়ে নিয়ে বাড়িতে থাকি। সোমবার দুপুরে বাড়ি ফিরে দেখি মেয়ে নেই। তাকে ফোন করলে ফোন বন্ধ পাই। তার স্বামীকে ফোন দিয়ে জানতে পারি সেখানেও যায়নি। তখন খুব চিন্তায় পড়ে যাই। আজ ডিসি অফিসের মাধ্যমে জানতে পারি পাচারকালে মেয়ে যশোরে উদ্ধার হয়েছে।’

বেসরকারি সংস্থা অপারেশন জেনারেশনের মাঠ তদন্ত কর্মকর্তা সুনিতা সরকার বলেন, ‘মেয়েটির ভাগ্য ভালো আমাদের নজরে পড়েছিল। তা না হলে ভারতে পাচার করা হতো। যে চক্র তাকে যশোর এনেছিল, তারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।’

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোরী যশোরে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। তাকে উদ্ধারের তথ্য তার পরিবারকে জানানো হয়েছে। বুধবার আমরা ওই মেয়েকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করব।’