বক্তব্য নয়, সরাসরি অ্যাকশনে যেতে চান ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার

তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর পরিদর্শন করছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান। আজ শুক্রবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান। এ সময় ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকেরা বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো বক্তব্য নয়, আমরা সরাসরি অ্যাকশনে যেতে চাই।’

বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান আজ শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে সালথায় এসে পৌঁছান। উপজেলা পরিষদ মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের পর তিনি ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শনে যান। তিনি প্রথমে উপজেলা পরিষদের নিচতলায় অবস্থিত কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় দেখেন। এরপর একে একে ত্রাণের গুদাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনসংলগ্ন গ্যারেজ, ভূমি অফিস, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ও সবশেষে থানা পরিদর্শন করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) জামাল পাশা, সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া প্রমুখ।

এদিকে গত সোমবার রাতে সালথায় সংঘটিত তাণ্ডবের ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। ২৬১ জনের নাম উল্লেখ করা ৫টি মামলার মোট আসামির সংখ্যা হবে ৪ হাজার। ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং মামলার আসামি হিসেবে এ পর্যন্ত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান শুক্রবার দুপুরে সালথায় সাংবাদিকদের বলেন, ৫টি মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি আলাদা আলাদা করে যোগ করলে তার সংখ্যা ১৭ হাজারের কাছাকাছি হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা চার হাজারের বেশি হবে না। কেননা, অজ্ঞাতনামা একই ব্যক্তিরা ওই সব মামলার আসামি।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জামাল পাশা বলেন, সালথার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে একজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি হলেন মিরান মোল্লা (৩৫)। তিনি উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের দরজাপুরুরা গ্রামের আবদুর রব মোল্লার ছেলে। গত সোমবার ওই তাণ্ডবের সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। বুধবার দুপুরে ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

জামাল পাশা আরও বলেন, এ ছাড়া আরও দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ দুজন হলেন সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙারদিয়া গ্রামের আবুল খায়ের (২৫) ও ভাওয়াল ইউনিয়নের গোপালীয়া গ্রামের মো. আমীর (৩০)। তাঁদের মধ্যে আবুল খায়ের পুলিশি পাহারায় ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে এবং মো. আমীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়নি।

এ পর্যন্ত আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে ৪৮ জনকে। এর মধ্যে ১১ জনের ২ দিন করে এবং ১৫ জনের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। তাঁদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকি ২২ জনের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে শুক্রবার জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

গত সোমবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার। এ সময় তাঁর গাড়ি থেকে নেমে কয়েক ব্যক্তি বাজারে উপস্থিত কয়েকজনকে লাঠিপেটা করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লোকজন গুজব ছড়িয়ে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও থানায় তাণ্ডব চালান। দুটি সরকারি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন