বগুড়া-জামালপুর নৌপথে ফেরি চালুর উদ্যোগ

শ্যালো ইঞ্জিনচালিত খেয়ানৌকা ছুটে চলেছে যমুনা নদীর বুক চিরে। খেয়ানৌকায় যাত্রীর উপচে পড়া ভিড়। নৌকার ওপরে ছাউনি নেই। নেই বসার ব্যবস্থা। পাটাতনে পা রেখে নৌকার দুই পাশে গাদাগাদি করে বসে শ খানেক যাত্রী। নড়েচড়ে বসারও সুযোগ নেই। ঝড় শুরু হলে একটু ঝাঁকুনি লাগলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এ দৃশ্য বুধবার সকালে জামালপুরের মাদারগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া ঘাট অভিমুখী যাত্রীবাহী খেয়ানৌকার।

যাত্রীরা বলছেন, ওপারের জামালপুরের মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও কাজলা ঘাট থেকে এপারের বগুড়ার সারিয়াকান্দির কালিতলা ও মথুরাপাড়া নৌঘাটে খেয়ানৌকায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজার মানুষ চলাচল করছে। মাদারগঞ্জ-সারিয়াকান্দির এই নৌপথই উত্তরবঙ্গের সঙ্গে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলার মানুষের যোগোযোগের অন্যতম মাধ্যম। এই বাস্তবতায় এই নৌপথে দীর্ঘদিন ধরে ফেরি চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী।

ময়মনসিংহ হয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে দূরত্ব কমাতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার সঙ্গে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের সরাসরি নৌযোগাযোগ স্থাপনে ফেরি চালুর প্রক্রিয়া অবশেষে শুরু হয়েছে। সরকারি এ উদ্যোগের কারণে উত্তরাঞ্চল ও ময়মনসিংহ বিভাগরে মানুষ আশার আলো দেখতে শুরু করেছে। সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ নৌপথে ফেরি চালু হলে সড়কপথে উত্তরবঙ্গ থেকে রাজধানীর দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার কমবে। এতে সময়ও সাশ্রয় হবে।

এই পথে ফেরি চালুর জন্য ফেরিঘাট নির্মাণ, সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, নাব্যতা ফেরাতে নদী খননসহ নদী সংস্কার ও উন্নয়নকাজে প্রকল্প গ্রহণের প্রাক-সম্ভ্যবতা যাচাইয়ে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল বুধবার সারিয়াকান্দি ও মাদারগঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করেছে। জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল ফেরি চালুর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করছেন।

প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন আইডব্লিউএমের পরামর্শক মো. মহিউদ্দীন পাটোয়ারি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগে দূরত্ব কমাতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ হয়ে যমুনায় ফেরি সার্ভিস চালুর দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা চলছে। প্রথমে বাহাদুরাবাদ-গাইবান্ধার বালাসি নৌপথে ফেরি চালুর পরিকল্পনা ছিল সরকারের। পরে সেই পরিকল্পনা আর এগোয়নি। এখন নতুন করে মাদারগঞ্জ-সারিয়াকান্দি ১৬ কিলোমিটার নৌপথে ফেরি চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

আইডব্লিউএমের পরামর্শক মো. মহিউদ্দীন পাটোয়ারি বলেন, ‘দুই দিন ধরে আমরা নদীর দুই পারের মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করছি কোন স্থানে ফেরিঘাট হলে নদীর নাব্যতা সারা বছর ঠিক থাকবে, যোগাযোগব্যবস্থা ও ঘাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং পণ্য পরিবহন সহজলভ্য হবে। সাধারণ মানুষের মতামতসহ কারিগরি নানা দিক বিবেচনা করে সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন এখান থেকে ফিরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বাহাদুরাবাদ-বালাসি রুটে ফেরি চলাচল বন্ধের পর বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলার মানুষ জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বদলে মাদারগঞ্জ হয়ে নৌকায় যমুনা পারপারের পর বগুড়া হয়ে যাতায়াত শুরু করেন। উত্তরবঙ্গের লোকজনও সারিয়াকান্দির কালিতলা বা মথুরাপাড়া ঘাট থেকে খেয়ানৌকায় নদী পারাপার হয়ে ওপারের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করছেন। এ পথে চলাচলে নৌকাভাড়া জনপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কালিতলা ঘাট থেকে মাদারগঞ্জ যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে।

এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান বলেন, এই পথে ফেরি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষ বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও রাজধানী ঢাকায় বাসে কম সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন। পাশাপাশি যমুনা সেতুর ওপর চাপ কমবে। ফেরি চালু হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।