বগুড়ায় উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তরুণ খুনের বিচার চেয়ে মানববন্ধন

বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী বনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। সোমবার ইনস্টিটিউটের ফটক এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আল জামিউ ওরফে বনি (২২) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খুনিদের বিচার ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের কলোনি এলাকায় বগুড়া সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

বান্ধবীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় গত শুক্রবার বিকেলে খুন হন বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আল জামিউ ওরফে বনি। তিনি বগুড়া সাইক্লিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়াও তিনি বিডি ক্লিন, রোভার স্কাউটসহ একাধিক সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মানববন্ধনে ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘বনি হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে বনির খুনিদের গ্রেপ্তারে গড়িমসির অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিনা অপরাধে বনিকে শুক্রবার বিকেলে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই আসামির নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হলেও এখনো আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বনি খুন হওয়ার পর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁদের দাবি, বনি হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। পাশাপাশি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোহাম্মদ তারেক, হীরা, রাফিউজ্জামান, শাহরিয়ার, মেহেদী হাসান, রিপন, শিমুল প্রমুখ বক্তব্য দেন। শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিতে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে একাত্বতা ঘোষণা করে বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাইম জাহান।

বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বান্ধবীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। শুক্রবার বিকেলে বনি তাঁর এক বান্ধবীকে নিয়ে শহরের মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল মাঠে আয়োজিত মাসব্যাপী তাঁতবস্ত্র কুটিরশিল্প মেলায় ঘুরতে যান। তখন সেখানে কয়েকজন বখাটে বনির বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করলে তিনি প্রতিবাদ করেন। পরে বনি বান্ধবীকে নিয়ে মেলার বাইরে কলোনি এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান। রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার পর ওই যুবকেরা বনির ওপর হামলা করে। তখন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর কারণে গুরুতর আহত হন বনি। আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ঘণ্টাখানেক পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আরও পড়ুন

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় রাতেই বনির বাবা আনিছুর রহমান বাদী হয়ে থানায় দুজনের নাম উল্লেখসহ তিন–চারজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ পর্যন্ত এজাহারে উল্লেখিত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শহরের বনানী পুলিশ ফাঁড়ির (ইনচার্জ) তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী বনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন শহরের নারুলী এলাকার ইউনুস আলীর ছেলে রুহেল (৩০) ও লতিফপুর কলোনি এলাকার রুস্তম আলীর ছেলে জিসান (২০)। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় পৃথক অভিযানে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ আজ আদালতে তোলা হয়েছে। মূল আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, এজাহারে উল্লেখিত দুই আসামি আত্মগোপন করেছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।