বগুড়ায় এক দিনে নতুন করে ৬৭ জনের করোনা শনাক্ত

করোনাভাইরাস পরীক্ষা
প্রতীকী ছবি

বগুড়ায় শীত আসতে না আসতেই করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ৮ মাসে জেলায় করোনার সংক্রমণে মারা গেছেন ২০০ জন। সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭।

বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়ায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। হঠাৎ করে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মাস্ক পরছেন না। সামাজিক দূরত্বও ভেঙে পড়েছে। বিয়েশাদি, সভা-সমাবেশ সবই চলছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই সমন্বিত প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব বলছে, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৬৭ জন রোগী করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এটি বিগত দুই মাসের তুলনায় এক দিনে সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ২২ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৪২ হাজার ৯৮৬টি। করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ৭ হাজার ৯৩৮ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১৯৩ জন। আর আজ ২২ নভেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৫৯৭ জন। করোনায় মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০০। গত এক মাসে জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৬৫৯। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক মাসে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৭।

৭ নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ২০৭। সে হিসাবে দুই সপ্তাহে আক্রান্ত বেড়েছে ৩৯০ জন। এই সময়ে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৬।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ এখনই সতর্কতা গ্রহণ না করলে করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ মোকাবিলা করা কঠিন হবে। বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রথম কোভিড রোগী শনাক্ত হয় এ বছরের ১ এপ্রিল। দ্বিতীয় রোগী শনাক্ত হয় ১৫ এপ্রিল। ২১ এপ্রিল এক দিনেই শনাক্ত হয় চারজন রোগী। এদিন জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ৯ মে পর্যন্ত জেলায় করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ছিল ৩৭। ওই দিন পর্যন্ত করোনায় কোনো মৃত্যু ছিল না।

১০ মে ঈদকে সামনে রেখে মার্কেট-বিপণিকেন্দ্র, শপিং মল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে কোভিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ১৪ জুনে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৪০২ পৌঁছায়। এক মাসে করোনায় মৃত্যু হয় ১৪ জনের। পরিস্থিতি সামাল দিতে শহরের ৯টি ‘রেড জোন’ এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১২ জুলাই জেলায় কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭৬৩। এদিন পর্যন্ত মৃত্যু সংখ্যা ছিল ৭০।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব বলছে, ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় করোনা অতিমারিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৮৮। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৮০৪। এদিন পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৪৭ হাজার ৭৪৮টি। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৪১৬। মৃত্যুর সংখ্যা ১৯৭। এদিন পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৫৩ হাজার ৮০৭টি।

স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত এক মাসে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে ৬১২ জন। মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৬ হাজার ৫৯টি। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত শেষ সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ১৮১ জন। মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।

সংক্রমণের হার কম ছিল আগের মাসে। ১৫ সেপ্টেম্বর জেলায় করোনায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ২৩০। মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭৩। এদিন পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৯০৯টি। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ১ মাসে আক্রান্ত হন ৫৭৮ জন।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এত দিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল গড়ে ২০ জন। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। শীতে রোগী আরও বাড়তে পারে।