বগুড়ায় পড়াশোনা করতে এসে শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার

হামলায় আহত শিক্ষার্থী আনারুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীতপড়াশোনা শেষে চাকরি করে দরিদ্র ভ্যানচালক বাবার সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন ছিল তাঁর। এই স্বপ্ন পূরণ করতে ডিপ্লোমা প্রকৌশল কোর্স শেষ করতে বগুড়া শহরে আসেন তিনি। ওঠেন বগুড়া শহরের একটি মেসে। কিন্তু বগুড়ায় এসেই বড় ধরনের বিপদে পড়ে যান তিনি। মেসে উঠতে না উঠতেই সন্ত্রাসীরা তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে না পারায় তাঁর ডান হাতের দুটি আঙুল কেটে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের ভয়ে এখন শহরছাড়া তিনি। এ ঘটনায় তাঁর ভাগ্যবদলের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত ওই শিক্ষার্থীর নাম আনারুল ইসলাম (২০)। বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পঞ্চম পর্বে বদলি শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। তিনি জয়পুরহাট টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে বগুড়া পলেটেকনিক থেকে বদলির ছাড়পত্র নিয়ে এসেছিলেন। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবরের মধ্যে তাঁর ভর্তির সময় বেঁধে দেওয়া আছে।

এখানে ভর্তি হওয়ার জন্যই ১১ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে এসে বগুড়া শহরের চকফরিদ এতিমখানা–সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার ছাত্রাবাসে উঠেছিলেন। ২১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে আটটার দিকে সন্ত্রাসীরা দিনের বেলা মেসে ঢুকে চাঁদা না পেয়ে তাঁর হাতের আঙুল কেটে দেয়। পরে স্থানীয় এক নারী অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।  সন্ত্রাসীদের ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে মেসে না ফিরে বাড়িতে গেছেন তিনি।

আনারুলের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার সদর ইউনিয়নে। তাঁর বাবা নজরুল ইসলাম ভ্যানচালক। ডান হাতের শাহাদৎ ও মধ্যমা আঙুল কেটে দেওয়ায় কলম ধরতেই পারছেন না তিনি। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাঁর পড়ালেখা।

আনারুলের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার সদর ইউনিয়নে। তাঁর বাবা নজরুল ইসলাম ভ্যানচালক। মা সাহারা খাতুন অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। ডান হাতের শাহাদৎ ও মধ্যমা আঙুল কেটে  দেওয়ায় কলম ধরতেই পারছেন না তিনি। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাঁর পড়ালেখা।

আনারুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর অনেক দিনের স্বপ্ন বিএসএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ভ্যানচালক বাবার সংসারে আর্থিক অসচ্ছলতা ঘোচাবেন। সেই স্বপ্ন থেকেই ডিপ্লোমা  প্রকৌশল ডিগ্রির জন্য তিনি বগুড়া পলিটেকনিকে বদলি নেন। জয়পুরহাট থেকে বদলির কাগজপত্র নিয়ে বগুড়া ১১ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় আসেন। ওঠেন বগুড়া পলিটেকনিক  ইনস্টিটিউটের পাশে চকফরিদ এতিমখানাসংলগ্ন ‘ইঞ্জিনিয়ার ছাত্রাবাস’ নামে একটি মেসে।

আনারুল বলেন, মেসে প্রথম মাসের সিটভাড়া ও ডাইনিং খরচ বাবদ ৯০০ টাকা জমা দেওয়ার পর তাঁর কাছে শ দুয়েক টাকা ছিল।  ভর্তির টাকা কীভাবে জোগাড় করবেন, তা নিয়েই দুশ্চিন্তাই ছিলেন।    ৩০ তারিখের পর বাড়ি থেকে বিকাশের মাধ্যমে ভর্তির জন্য টাকা পাঠানোর কথা ছিল তাঁর বাবার।

আনারুল ইসলাম আরও বলেন, ওই ছাত্রাবাসের নিচতলায় অন্য এক ছাত্রের সঙ্গে তিনি একটি কক্ষে উঠেছিলেন। ২১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে মেসের দোতলায় ডাইনিংয়ে খেতে যান তিনি। খাওয়াদাওয়া সেরে বারান্দায় সবে দাঁড়িয়েছেন, এ সময় দুজন যুবক তাঁকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুখ চেপে ধরে দোতলার একটি বাথরুমে নিয়ে যান। এরপর তাঁরা চাঁদা ও মুঠোফোন দাবি করেন। কিন্তু চাঁদা না দেওয়া তারা ধারালো চাকু দিয়ে তাঁর ডান হাতের দুই আঙুল কেটে দেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে মেসের বাইরে ফেলে রেখে তাঁরা পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন জড়ো হওয়ার পর একজন নারী তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।

মেস পরিচালক এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি তিনটি বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মেসের ব্যবসা করছেন। সব কটি মেসেই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা থাকেন। এর মধ্যে তিনতলাবিশিষ্ট ওই মেসে কয়েক দিন আগে আনারুল নামের ওই শিক্ষার্থী ওঠেন। সিসিটিভি পরীক্ষা করে ওই মেসে বহিরাগত কাউকে দেখা যায়নি। আঙুল কেটে নেওয়ার দাবি করা হলেও মেসের অন্য শিক্ষার্থীরা তাঁর চিৎকারও শোনেননি।

এ বিষয়ে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বুধবার একাডেমিক কাউন্সিল ও প্রশাসনিক কমিটির সভা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনা খতিয়ে দেখতে ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল বিভাগের প্রধান শফিউল আল আজিজকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা বাড়িতে গিয়ে ওই শিক্ষার্থী এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বুধবারের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর বুধবার ওই মেসে গিয়ে শিক্ষার্থী ও মেসমালিকের সঙ্গে কথা বলে এবং সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে কেউ তাঁর (আনারুল) আঙুল কেটে নিয়েছে, এমন ঘটনার সত্যতা মিলেনি। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।