বগুড়ায় বাধার মুখে খালখনন বন্ধ

বগুড়ার শেরপুরে বাধার মুখে বন্ধ হয়ে গেছে শিমলা–সাতবাড়িয়া খালখনন। খালের মধ্যে পড়ে আছে খননযন্ত্র
প্রথম আলো

বগুড়ার শেরপুরে বাধার মুখে পড়েছে খালখনন কর্মসূচি। এতে এক সপ্তাহ ধরে খালখননের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। খালটি খননের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী।
উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নে এই খাল। এটি পরিচিতি ‘শিমলা সাতবাড়িয়া’ হিসেবে। খালের শিমলা সাতবাড়িয়া মৌজার ৫২ শতাংশ জায়গা ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে দাবি করছে একটি পরিবার।

উপজেলা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) দপ্তর সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খালটির খনন শুরু হয়েছে গত ১৫ মে। শেষ হওয়ার কথা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। খননকাজের দূরত্ব দুই কিলোমিটার। খননের বিপরীতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। খননকাজের অন্তত ৭০ শতাংশ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।
বিশালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান বলেন, তাঁর জানামতে স্বাধীনতার আগে এ খাল তৈরি করা হয়। স্বাধীনতার পর বিএনপি সরকারের আমলে খালটি আবার খনন করা হয়। বর্তমানে খালের অনেকাংশ মাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পুনরায় খননকাজ চলছিল। কিন্তু শিমলা গ্রামের আজিজুল হকের পরিবার থেকে বাধা দেওয়ায় এ খননকাজ বন্ধ রয়েছে।

খননকালে শিমলা গ্রাম দিয়ে যাওয়ার সময় আজিজুল হক খালের মধ্যে তাঁর নিজস্ব জমি আছে দাবি করে বাধা দেন। তাঁর দাবি করা জমির পরিমাণ অন্তত ১০০ মিটার। এ কারণে তাঁরা খননকাজ বন্ধ।
সাইফুল ইসলাম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, শিমলা গ্রামটির পশ্চিম পাশে এ খাল। খালটিতে এখন পানি প্রবাহিত হয়। তবে খালের গভীরতা কম। খননকাজে বাধা দেওয়ার কারণে খালের মধ্যে পড়ে রয়েছে খননযন্ত্র।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, খননকালে শিমলা গ্রাম দিয়ে যাওয়ার সময় আজিজুল হক খালের মধ্যে তাঁর নিজস্ব জমি আছে দাবি করে বাধা দেন। তাঁর দাবি করা জমির পরিমাণ অন্তত ১০০ মিটার। এ কারণে তাঁরা খননকাজ বন্ধ রেখেছেন।

খালটি খননে বাধা দেওয়ার ঘটনাটি তাঁর দপ্তরে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লিয়াকত আলী সেখ, ইউএনও, শেরপুর

আজিজুল হক দাবি করেন, যে জমির ওপর দিয়ে খাল খনন করা হচ্ছে, তা তাঁদের পরিবারের কেনা সম্পত্তি। দুটি দাগে তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ ৫২ শতাংশ। সর্বশেষ মাঠ খতিয়ান তাঁদের নামে হয়েছে। ধান চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় এ জমিতে অন্তত ১৫ বছর ধরে তাঁরা চাষাবাদ করেন না। জমিটি তাঁদের সম্পত্তি হওয়ায় খননকাজে তাঁরা বাধা দিয়েছেন।
এ নিয়ে শিমলা গ্রামের মশিউর রহমান বলেন, বিগত সময়ে ওই জমির ওপর দিয়ে সরকারি উদ্যোগে খালের খনন করা হয়। সে সময় কেউ বাধা দেয়নি। কিন্তু এখন আজিজুল হকের পরিবার থেকে কেনা সম্পত্তি দাবি করে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

শিমলা সাতবাড়িয়া মৌজার অন্তত ১৫ কৃষক বলেন, এই মৌজার জমিগুলো পাশের মৌজাগুলোর চেয়ে অন্তত পাঁচ ফুট নিচু। এ কারণে প্রতিবছর অতিবৃষ্টিতে মাঠের উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলার আগেই পানিতে ডুবে যায়। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে অন্তত ৫০০ কৃষক পরিবার। জলাবদ্ধতার কারণে এ মৌজার অন্তত ৩০০ একর জমির কৃষক চাষবাদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। খালটি খনন করা হলে বৃষ্টির পানি খালে জমে থাকবে। তাতে বোরো মৌসুমে ধান চাষসহ অন্য ফসল চাষে অনেক উপকারে আসবে।

যে জমির ওপর দিয়ে খাল খনন করা হচ্ছে, তা আমাদের পরিবারের কেনা সম্পত্তি। দুটি দাগে সম্পত্তির পরিমাণ ৫২ শতাংশ।
আজিজুল হক, যার বাধায় খননকাজ বন্ধ

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী আসমাউল বিন হোসেন বলেন, খালটি তাঁরা সংস্কারের জন্য খনন কার্যক্রম শুরু করেছেন। খননের ফলে অতিবৃষ্টির পানি খালে জমে থাকবে। এতে কৃষকের উপকার হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সেখ বলেন, খালটি খননে বাধা দেওয়ার ঘটনাটি তাঁর দপ্তরে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।