বগুড়ায় ‘বিষাক্ত’ মদ বিক্রির অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪, হোমিও দোকানে অভিযান

বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পারুল হোমিও ল্যাবরেটরীজের মালিক নুরুন্নবীকে গ্রেপ্তার করে তাঁর কারখানায় অভিযানে নিয়ে যায় পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী মধ্যপাড়ায়প্রথম আলো

বগুড়ায় ‘বিষাক্ত’ মদ খেয়ে ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সদর থানা-পুলিশ ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করে। আজ বুধবার থানা চত্বরে এক সংবাদ বিফ্রিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শহরের ফুলবাড়ি এলাকার পি এম (পারুল মেডিকেল) হোমিও ল্যাবরেটরির অন্যতম মালিক ও সদরের ছোট কুমিড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নুরুন্নবী (৫৮), শহরের গালাপট্টি এলাকার হাসান হোমিও হলের কর্মচারী ও শহরের আকাশতারা এলাকার বাসিন্দা আবু জুয়েল (৩৫), গালাপট্টি এলাকার মুন হোমিও হলের মালিক আবদুল খালেক এবং করতোয়া হোমিও হলের মালিক ও শহরের নাটাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহিদুল আলম (৫৫)।

অন্যদিকে ‘বিষাক্ত’ মদ পানে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা আরও এক বেড়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৬-তে পৌঁছেছে। নতুন করে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম ক্ষিতীশ চন্দ্র ওরফে ভেলু (৬০)। তিনি পুরান বগুড়া এলাকার বাসিন্দা। মঙ্গলবার বাড়িতেই তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। অন্যদিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন করে আবু বক্কর (৪৫) নামে আরও একজন মদ পানে অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছেন বলে সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ নিশ্চিত করেছেন। উপপরিচালক বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ‘বিষাক্ত’ মদ পানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন মারা গেছেন।

বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পারুল হোমিও ল্যাবরেটরীজ কারখানায় অভিযানে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী মধ্যপাড়ায়
প্রথম আলো

নতুন একজনসহ ‘বিষাক্ত’ মদ পানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন পাঁচজন। তাঁরা হলেন শহরের শিববাটি এলাকার দেলোয়ার হোসেন রঞ্জু (৩৫), ফুলবাড়ি এলাকার পায়েল আহমেদ (৩০), আইয়ুব আলী (৪৪), মাসুদ রানা (৪৪) এবং শাজাহানপুর উপজেলার আবু বক্কর (৪৫)।

আরও পড়ুন

আজ সংবাদ ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা দাবি করেছেন, হাসপাতাল প্রশাসন ও পরিবারের দেওয়া তথ্য বিচার–বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত মদ পানে আটজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে জেলা পুলিশ।

এই আটজন হলেন শহরের তিনমাথা পুরান বগুড়া দক্ষিণপাড়া এলাকার প্রেমনাথ রবিদাস (৭০), তাঁর ভাই রামনাথ রবিদাস (৬০), প্রেমনাথের ছেলে সুমন রবিদাস (৩৮), পুরান বগুড়া জিলাদারপাড়ার কুলিশ্রমিক রমজান আলী (৬৫), বগুড়া সদরের ফাঁপোড় পশ্চিমপাড়া এলাকার রিকশাচালক জুলফিকার রহমান (৫৬), ফুলবাড়ী মধ্যপাড়ার রিকশাচালক আবদুল জলিল (৬৫), শহরের ফুলবাড়ী এলাকার কারখানাশ্রমিক পলাশ (৩৪) ও শহরের কাটনারপাড়া এলাকার হোটেলশ্রমিক সাজু মিয়া (৫৫)। এই আটজনের লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। বাকিদের ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।

বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । বাঁ থেকে করতোয়া হোমিও হলের শাহিদুল আলম , পারুল হোমিও ল্যাবরেটরীজের নুরুন্নবী , মুন হোমিও হলের আব্দুল খালেক ও হাসান হোমিও ফার্মেসির কর্মচারী আবু জুয়েল। আজ বুধবার বেলা ১২টা দিকে বগুড়া সদর থানায়
প্রথম আলো

তবে পুলিশ আটজনের প্রাণহানির কথা নিশ্চিত করলেও পরিবার, স্বজন, প্রতিবেশী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে মদ পানে আরও আটজনের প্রাণহানির তথ্য মিলেছে। এই আটজন হলেন শাজাহানপুর উপজেলার দুরুলিয়া মণ্ডলপাড়ার সিএনজি মেকার মেহেদী হাসান (২৮), রহিমাবাদ উত্তরপাড়ার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আবদুর রাজ্জাক (৪০), কাটাবাড়িয়া এলাকার জমি মাপজোখকারী সার্ভেয়ার আহাদ আলী (৩৮), বগুড়া শহরের চারমাথা ভবেরবাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন (৫৫), শহরের তিনমাথা পুরান বগুড়া এলাকার রাজমিস্ত্রি রমজান আলী (৬০), কাটনারপাড়া হটুমিয়া লেনের বাবুর্চি মোজাহার আলী (৭৫), পুরান বগুড়ার ক্ষিতীশ চন্দ্র ওরফে ভেলু (৬০) ও কাহালু পৌর এলাকার উলুট্ট মহল্লার অটোরিকশার চালক কালাম (৫০)।

‘বিষাক্ত’ মদ বিক্রির অভিযোগে দেলোয়ারের ভাই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় সোমবার রাতে একটি মামলা করেছেন। মামলায় খান হোমিও হলের মালিক শাহিনুর রহমান, পারুল হোমিও ল্যাবরেটরির মালিক নুর নবী এবং পুনম হোমিও হলের মালিক নুর আলমকে আসামি করা হয়েছে।

পারুল হোমিও ল্যাবরেটরীজ কারখানায় অভিযানের সময় সেখানে উৎসুক জনতার ভিড়। আজ বুধবার দুপুরে বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী মধ্যপাড়ায়
প্রথম আলো

মদ উদ্ধারে অভিযান

অন্যদিকে আজ দুপুরের দিকে পুলিশ শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় পারুল হোমিও ল্যাবরেটরি, পুনম হোমিও হল, গালাপট্টির মুন হোমিও হল ও করতোয়া হোমিও হল নামে চারটি পাইকারি দোকানে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় এসব দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ মদ উদ্ধার করা হয়।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হ‌ুমায়ূন কবির অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে বেলা আড়াইটায় প্রথম আলোকে বলেন, অভিযান এখনো চলছে। কী পরিমাণ মদ আটক করা হয়েছে, সেটা অভিযানের পর জানিয়ে দেওয়া হবে।
বিষাক্ত মদ পান করে প্রাণহানির ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিফা রওনক নিতুর নেতৃত্বে একটি দল।

রিফা রওনক নিতু বলেন, তাঁরা মূলত প্রাণহানির কারণ, মদের উৎস ও বিক্রেতা কারা তা জানার চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুন