বগুড়ায় বেশি দামে আলুবীজ বিক্রি করছে বিএডিসি

কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান কৃষি বিপণন অধিদপ্তর হিমাগার পর্যায়ে ১ কেজি আলুর দাম ২৭ টাকা বেঁধে দিয়েছে। অথচ বিএডিসি তাদের প্রত্যয়িত ১ কেজি আলুবীজ কৃষকের কাছে বিক্রি করছে ৪৮ টাকায়।

সরকারের বেঁধে দেওয়া দর মানছে না সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান কৃষি বিপণন অধিদপ্তর হিমাগার পর্যায়ে ১ কেজি আলুর দাম ২৭ টাকা বেঁধে দিয়েছে। অথচ বিএডিসি তাদের প্রত্যয়িত ১ কেজি আলুবীজ কৃষকের কাছে বিক্রি করছে ৪৮ টাকা। এ জন্য কৃষককে কেজিতে ২১ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।

বিএডিসি গত মৌসুমে কৃষকের কাছে অ্যাসটরিক ও ক্যারেজ জাতের ১ কেজি ‘এ’ গ্রেডের প্রত্যয়িত আলুবীজ বিক্রি করেছে ২৮ টাকা। সেই আলু এবার সংস্থাটি কৃষকের বিক্রি করছে ৪৮ টাকা কেজিতে।

চলতি মৌসুমে বগুড়া অঞ্চলে (বগুড়া ও জয়পুরহাট) বীজ আলুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। বিএডিসি কৃষকের কাছে প্রত্যয়িত আলুবীজ সরবরাহ করছে ৪ হাজার ৪৬৭ মেট্রিক টন। বাজারে আলুর দামে ঊর্ধ্বগতিতে বিএডিসির আলুবীজের আশায় থাকলেও সরবরাহ ঘাটতিতে হতাশ কৃষক। হিমাগারে বীজ আলুর মজুত পরিস্থিতিও হতাশাব্যঞ্জক। এ মৌসুমে আলুবীজ সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আলুর উৎপাদন এলাকাখ্যাত বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা। এ মৌসুমে বগুড়া জেলায় ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের জন্য ৮৫ হাজার মেট্রিক টন আলুবীজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে কৃষি বিভাগ থেকে বিএডিসির কাছে আলুবীজের চাহিদা পাঠানো হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন।

অন্যদিকে জয়পুরহাটে ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের জন্য ৫০ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন বীজ প্রয়োজন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আলুবীজের চাহিদা পাঠানো হয়েছে ১৫ হাজার ৭৪৫ মেট্রিক টন।

বিএডিসি-বীজ, বগুড়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক শহীদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, এবার দুই জেলায় বিপুল পরিমাণ বীজ আলুর চাহিদা থাকলেও ডিলারদের মাধ্যমে বিএডিসির প্রত্যয়িত আলুবীজ সরবরাহ করা হচ্ছে ৪ হাজার ৪৬৮ মেট্রিক টন। এর মধ্যে জয়পুরহাট জেলায় ২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন এবং বগুড়ায় ২ হাজার ১৬৮ মেট্রিক টন বীজ আলু দেওয়া হয়েছে। গত বছর ২ জেলায় বিএডিসির আলুবীজ সরবরাহ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৫৩ মেট্রিক টন।

বিএডিসি (বীজ) বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার অ্যাসটরিক ও ক্যারেজ জাতের আলুবীজ ‘বি’ ও ‘এ’ গ্রেড কৃষক পর্যায়ে যথাক্রমে ৪৭ ও ৪৮ টাকা এবং ডিলার পর্যায়ে কেজিপ্রতি ৪৩ ও ৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গত বছর কৃষক পর্যায়ে এ আলুর কেজিপ্রতি দাম ছিল যথাক্রমে ২৫ ও ২৮ টাকা। এবার ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, গ্রানুলা ও লেডি রোজেটা জাতের আলুবীজের কৃষক পর্যায়ে দর নির্ধারণ করা হয়েছে কেজিপ্রতি যথাক্রমে ৪২ ও ৪৩ (এ ও বি গ্রেড) এবং ডিলার পর্যায়ে ৪৬ ও ৪৭ টাকা।

গত বছর এ আলুর দাম ছিল কৃষক পর্যায়ে কেজিপ্রতি যথাক্রমে ২৩ টাকা ৫০ পয়সা ও ২৪ টাকা ৫০ পয়সা। বেশি দর নির্ধারণ প্রসঙ্গে কার্যালয়ের উপরিচালক মো. শহীদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গতবারের চেয়ে এবার আলুবীজের ঘাটতি রয়েছে। বীজ আলু কেউ যাতে খাবার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, এ জন্য গতবারের চেয়ে বেশি দর নির্ধারণ করা হয়েছে।

কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি ও টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বলেন, বগুড়ায় ৩৫টি হিমাগার আছে। এসব হিমাগারে পর্যাপ্ত বীজ আলু নেই। ১৬ অক্টোবর জেলা প্রশাসন থেকে হিমাগারমালিকদের চিঠি দিয়ে দ্রুত আলু খালাস করতে বলা হয়। বীজ আলু খালাসে বাধ্য করতে অনেক হিমাগারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়। এতে হিমাগারমালিকেরা আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও কৃষক বীজসংকটে পড়বেন।

হোসনে আরা আরও বলেন, সরকার হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম কেজিপ্রতি ২৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। আবার বিএডিসি তাদের হিমাগার থেকে ১ কেজি আলু কৃষকের কাছে বিক্রি করছে ৪৮ টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানই সরকারের বেঁধে দেওয়া দর মানছে না। অথচ হিমাগারে প্রশাসনের অভিযানের নামে মালিকদের লোকসানের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন বগুড়া জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, দর বেঁধে দেওয়ার পরপরই হিমাগার থেকে আলু খালাস বন্ধ ছিল। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত আলু খালাসে হিমাগারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়েছিল। বিএডিসি কেন বেশি দামে বীজ আলু বিক্রি করছে, তা খোঁজ নেওয়া হবে।