বগুড়ায় যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপরে, বসতবাড়ি-ফসলের খেত প্লাবিত

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারিয়াকান্দির মথুরাপাড়া পয়েন্টে আজ রোববার দুপুরে ১৭ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহিত হয়।

আজ দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ১৬ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটারে।

যমুনায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকায় বসতবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে খেতের হাজারো বিঘা পাট, আউশ ধান, সবজির খেত ও বীজতলা। বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় চরাঞ্চলের মানুষ দিশেহারা। তাঁরা সহায়–সম্বল, গরু-ছাগল নিয়ে পার্শ্ববর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।

বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, যমুনার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে গতকাল শনিবার সকাল ছয়টায় পানি প্রবাহিত হয়েছে ১৬ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে আজ সকাল ছয়টায় ১৬ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২টায় ১৭ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার হয়।

সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উজানের ঢলে যমুনা নদীর পানিতে উপজেলার চালুয়াবাড়ি, হাটশেরপুর (আংশিক), কাজলা, কর্নিবাড়ি এবং বহাইল ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বসতবাড়িতে কোমরসমান পানি। চরে বসবাসকারী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পানিবৃদ্ধির সঙ্গে নদীতীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে প্রবল ভাঙন। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কৃষকের পাট, আউশ ধানসহ বিস্তীর্ণ ফসলের খেত। পরিস্থিতির বেশি অবনতি ঘটেছে উপজেলার চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের আউচারপাড়া, উত্তর শিমুলতাইড়, চর দলিকা, হাটবাড়ি, খাটিয়ামারি, কাশিরপাড়া, সুজনেরপাড়া, চর নোয়ারপাড়া, বিরামের পাঁচগাছি ও ভাঙ্গুরগাছা চরে।

চালুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, যমুনায় পানি বেড়ে যাওয়ায় তাঁর ইউনিয়নের ছয় থেকে সাতটি চর ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। খেতের পাটসহ নানা ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। উজানের ঢলের স্রোতের সঙ্গে প্রবল নদীভাঙনে দিশেহারা মানুষ। বসতবাড়ি নিমজ্জিত হওয়ায় এবং নদীভাঙনে প্রায় ৬০০ পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছেন। দিশেহারা মানুষ পার্শ্ববর্তী সুজনেরপাড়া গুচ্ছগ্রাম ও তেকানিচুকাইনগর চরে উঁচু জায়গায় এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। গত বছরের বন্যায় চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৫০০ পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়ে। নদীতে বিলীন হয় ভাঙ্গুরগাছা, বহলাডাঙ্গা, বিরামের পাঁচগাছিসহ কয়েকটি চর।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শওকত জামিল প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলায় ১১ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে পাট, আউশ ধান, সবজি, বীজতলাসহ নানা ফসল রয়েছে। এর মধ্যে যমুনার ঢলে ৮০৬ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে ৬৭৫ হেক্টর আবাদি জমি।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, ‘যমুনায় পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চলবেষ্টিত কয়েকটি ইউনিয়নে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের সব প্রস্তুতি রয়েছে।’